পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৭৬
বাংলা শব্দতত্ত্ব

 অন্য অন্য, অনেক অনেক, নূতন নূতন, ঘন ঘন, টুকরা টুকরা— এগুলি বিভক্ত বহুলতাবাচক। নূতন নূতন কাপড়, বলিলে প্রত্যেক নূতন কাপড়কে পৃথক করিয়া দেখা হয়। অনেক অনেক লোক, বলিলে লোকগুলিকে অংশে অংশে ভাগ করা হয়, কিন্তু শুদ্ধ ‘অনেক লোক’ বলিলে নিরবচ্ছিন্ন বহু শোক বোঝায়।

 লাল লাল, কালো কালো, লম্বা লম্বা, মোটা মোটা, রকম রকমা— এগুলিও পুর্বোক্ত শ্রেণীর। লাল লাল ফুল, বলিলে ভিন্ন ভিন্ন অনেকগুলি লাল ফুল বোঝায়।

 যাকে যাকে, যেমন যেমন, যেখানে যেখানে, যখন যখন, যত যত, যে যে, যারা যারাা— এগুলিও পূর্বোক্তরূপ।

 আশায় আশায়, ভয়ে ভয়ো— এ দুইটিও ওই প্রকার। আশায় আশায় আছি, অর্থাৎ প্রত্যেক বার আশা হইতেছে; ভয়ে ভয়ে আছি, অর্থাৎ বারংবার ভয় হইতেছে। অর্থাৎ ক্ষণে ক্ষণে পৃথক পৃথক রূপে আশা বা ভয় উদ্রেক করিতেছে।

 মুঠো মুঠো, ঝুড়ি ঝুড়ি, বস্তা বস্তা— এগুলিও পূর্বানুরূপ।

 টাটকা টাটকা, গরম গরম, ঠিক ঠিক এগুলি প্রকর্ষবাচক।

 টাটকা টাটকা বলিলে টাটকা শব্দকে বিশেষ করিয়া নিশ্চয় করিয়া বলা যায়।

 চার চার, তিন তিন- এগুলিও পুর্ববৎ। চার চার পেয়াদা আসিয়া হাজির, অর্থাৎ নিতান্তই চারটে পেয়াদা বটে।

  এই প্রসঙ্গে ১৩০৮ আষাঢ় সংখ্যা বঙ্গদর্শনে প্রকাশিত ‘মাসিক-সাহিত্য-সমালােচনা’র একটি অংশ উদ্ধৃত হইল—

 সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকায় বঙ্গদর্শনসম্পাদক ‘শব্দদ্বৈত’ নামক এক প্রবন্ধ লিখিয়াছিলেন। ফাল্গুন মাসের প্রদীপে তাহার একটি সমালােচনা বাহির হইয়াছিল। শ্রীযুক্ত বিহারীলাল গোস্বামী সেই সমালােচনা অবলম্বন করিয়া উক্ত বিষয়ের আলােচনা করিয়াছেন। মূল প্রবন্ধলেখকের নিকট এই আলােচনা অত্যন্ত হৃদ্য। এ সম্বন্ধে আমাদের বক্তব্য পরিস্ফুট করিয়া বলিতে গেলে সংক্ষিপ্ত সমালােচনার সীমা লঙ্ঘন করিবে। কেবল একটা উদাহরণ লইয়া আমাদের বক্তব্যের আভাসমাত্র দিব — আমরা বলিয়াছিলাম, ‘চার চার’ ‘তিন তিন’ প্রকর্ষবাচক। অর্থাৎ যখন বলি ‘চার চার