পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -দ্বিতীয় সংস্করণ.pdf/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ه/o পথ হইল ভাষা। কিছুকাল হইতে বাংলা দেশে এই ভাষায় দুই বহরের পথ চলিত আছে। একটা মুখের বুলির পথ, আর একটা পুথির বুলির পথ। দুই একজন সাহসিক বলিতে স্বরু করিয়াছেন যে, পথ এক মাপের হইলে সকল পক্ষেই সুবিধা । অথচ ইহাতে বিস্তর লোকের অমত। এমন কি তারা এতই বিচলিত যে, সাধু ভাষার পক্ষে তারা যে ভাষা প্রয়োগ করিতেছেন তাহাতে বাংলা-ভাষায় আর যা-ই হোক, সাধুতার চর্চা হইতেছে না। এ তর্কে যদিও আমি যোগ দিই নাই তবু আমার নাম উঠিয়াছে। এ সম্বন্ধে আমার যে কী মত তাহা আমি ছাড়া আমার দেশের পনেরে আন লোকেই একপ্রকার ঠিক করিয়া লইয়াছেন, এবং র্যার যা মনে আছে বলিতে কস্থর করেন নাই । ভাবিয়াছিলাম চারিদিকের তাপটা কমিলে ঠাণ্ডার সময় আমার কথাটা পাড়িয়া দেখিব । কিন্তু বুঝিয়াছি সে আমার জীবিত কালের মধ্যে ঘটিবার অাশা নাই । অতএব আর সময় নষ্ট করিব না । ছোটোবেলা হইতেই সাহিত্য রচনায় লাগিয়াছি। বোধ করি সেই জন্যই ভাষাটা কেমন হওয়া উচিত সে সম্বন্ধে আমার স্পষ্ট কোনো মত ছিল না । যে-বয়সে লিখিতে আরম্ভ করিয়াছিলাম তখন, পুথির ভাষাতেই পুথি লেখা চাই, এ কথায় সন্দেহ করিবার সাহস বা বুদ্ধি ছিল না। তাই, সাহিত্যভাষার পথটা যে এই সরু বহরের পথ, তাহা যে প্রাকৃত বাংলা-ভাষার চওড়া বহরের পথ নয়, এই কথাটা বিনা দ্বিধায় মনের মধ্যে পাকা হইয়া গিয়াছিল ।