পাতা:বাখতিন - তপোধীর ভট্টাচার্য.pdf/৩০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
করছেন। এবছর গ্রীষ্মে সময়-প্রকরণ ও ক্রনোটোপ সম্পর্কিত প্রতিবেদনের উপসংহার লিখেছেন। গোর্কি ইনস্টিটিউটের পত্রিকা কনটেক্সট-এর কর্ণধারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হচ্ছে। স্কলোভস্কি তখনও জীবিত; বাড়ি কাছাকাছি বলে প্রায়ই বাখতিনের সঙ্গে দেখা করতে আসছেন।
১৯৭৪...: সাহিত্য-গবেষণার পদ্ধতি সংক্রান্ত প্রবন্ধ লিখছেন তিনি। এবছরেই তা কনটেক্সট পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এটাই তার জীবিত অবস্থায় প্রকাশিত শেষ নিবন্ধ। বছরের শেষে তাঁর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হওয়ায় বাড়িতে দিন-রাত নার্সের ব্যবস্থাও করতে হচ্ছে। তা সত্ত্বেও তিনি গোগোল সম্পর্কিত একটি নতুন বইয়ের কাজ শুরু করেছেন। এবং ডস্টয়েভস্কি সম্পর্কিত আরেকটি বইয়ের প্রাথমিক খসড়া তৈরি করছেন। স্বভাবত এই দুটি রচনাপ্রকল্পের কিছু কিছু খসড়া মাত্র পাওয়া গেছে। এসময় নানা বিষয়ে বহু চিন্তা তিনি সূত্রাকারে রেখে গেছেন। তা সত্ত্বেও এদের মধ্যে মৌলিক চিন্তনের গভীরতা আশ্চর্যভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। আগস্ট মাসের পরে অবশ্য বাখতিনের ফুসফুসের পীড়া এত সঙ্কটজনক হয়ে উঠছে যে তিনি আর লেখার কাজ চালিয়ে যেতে পারছেন না।
১৯৭৫...: ৭ মার্চ রাত দুটোয় বাখতিনের দেহাবসান। মৃত্যুর আগে তাঁর অন্তিম উচ্চারণ ‘আমি তোমার কাছে যাচ্ছি।’ সারা জীবন ধরে দ্বিবাচনিকতার কর্ষণ যাঁর একমাত্র ধর্ম, তাঁর উচ্চারণে অমেয় ঈশ্বর নয়, প্রত্যুত্তর-যোগ্যতা সম্পন্ন অপর পরিসরের সঙ্গে সংযোগের অন্তহীন সম্ভাবনাই দ্যোতিত হয়েছে। দু’দিন পরে ৯ মার্চ, তাঁকে এলেনার পাশেই সমাহিত করা হয়। শেষকৃত্যে উপস্থিত রয়েছেন স্কলোভস্কি এবং বাখতিনের প্রিয় শিষ্য-ত্রয়ী কোঝিনোভ, বোচারোভ ও গাচেভ। তরুণ প্রজন্মের কাছে বাখতিন যুগস্রষ্টা গুরুর মর্যাদা পেয়েছেন বলে তাঁর মৃত্যু আলোড়ন তৈরি করেছে। যিনি বিশ্বাস করতেন, দ্বিবাচনিকতার পরিসর অনন্ত, তাঁর মরজীবনের অবসান হওয়ার পরেও অক্ষুণ্ণ রয়েছে চিন্তাজীবনের পরম্পরা। তাই বিশ শতকের শেষ দশক পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে তাঁর বইয়ের প্রকাশনা— রুশ ও ইংরেজি সহ পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায়।
২৬