পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১০২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৯৬
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

যে বস্তুই হোক যখন সে নিত্য তার আস্বাদ দিয়ে আমাদের মনে পরমসুন্দরের স্বল্পাধিক স্পর্শ অনুভব করিয়ে গেল সে সুন্দর বলে’ আমাদের কাছে নিজেকে প্রমাণ করলে। আমার কাছে কতকগুলো জিনিষ কতকগুলো ভাব সুন্দর ঠেকে কতক ঠেকে অসুন্দর, এই ঠেকলো সুন্দর এই অসুন্দর, তোমার কাছেও তাই, আমার মনের সঙ্গে মেলে না তোমারটি তোমার সঙ্গে মেলে না আমারটি। সুন্দরের অসুন্দরের অবিচলিত আদর্শ চলায়মান জীবনে কোথাও নেই, সুতরাং যেদিক দিয়েই চল সুন্দর অসুন্দর সম্বন্ধে বিতর্ক মেটবার নয়, কাযেই এই অতৃপ্তিকেই—এই সুখ-দুঃখে আলো-আঁধারে সুন্দর, অসুন্দরে মেলা খণ্ড-বিখণ্ড সত্য সুন্দর এবং মঙ্গলকে—সম্পূর্ণভাবে মেনে নিয়ে যে চলতে পারে, সেই সুন্দরকে এক ও বিচিত্রভাবে অনুভব করবার সুবিধে পায়। জগৎ যার কাছে তার ছোট লোহার সিন্দুকটিতেই ধরা আর জগৎ যার কাছে লোহার সিন্দুকের বাইরেও অনেকখানি বিস্তৃত ধূলোর মধ্যে কাদার মধ্যে আকাশের মধ্যে বাতাসের মধ্যে, তাদের দু’জনের কাছে সুন্দর ছোট বড় হয়ে দেখা যে দেয় তার সন্দেহ নেই! সিন্দুক খালি হ’লে যার সিন্দুক তার কাছে কিছুই আর সুন্দর ঠেকে না, কিন্তু যার মন সিন্দুকের বাইরের জগৎকে যথার্থভাবে বরণ করলে তার চোখে সুন্দরের দিকে চলবার অশেষ রাস্তা খুলে গেল, চলে গেল সে সোজা নির্বিচারে নির্ভয়ে। যখন দেখি নৌকা চলেছে ভয়ে ভয়ে, পদে পদে নোঙ্গর আর খোঁটার আদর্শে ঠেকতে ঠেকতে, তখন বলি, নৌকা সুন্দর চল্লো না, আর যখন দেখলেম নৌকা উল্টো স্রোতের বাধা উল্টো বাতাসের ঠেলাকে স্বীকার করেও গন্তব্য পথে সোজা বেরিয়ে গেল ঘাটের ধারের খোঁটা ছেড়ে নোঙ্গর তুলে নিয়ে, তখন বলি, সুন্দর চলে গেল!

 সুন্দর অসুন্দর–জীবন-নদীর এই দুই টান—একে মেনে নিয়ে যে চল্লো সেই সুন্দর চল্লো আর যে এটা মেনে নিতে পারলে না সে রইলো যে কোনো একটা খোঁটায় বাঁধা। ঘাটের ধারে বাঁশের খোঁটা, তাকে অতিক্রম করে চলে’ যায় নদীর স্রোত নানা ছন্দে এঁকে বেঁকে,—আর্টের স্রোতও চলেছে চিরকাল ঠিক এই ভাবেই চিরসুন্দরের দিকে। সুন্দর করে’ বাঁধা আদর্শের খোঁটাগুলো আর্টের ধাক্কায় এদিক ওদিক দোলে, তারপর একদিন যখন বান ডাকে খোঁটা সেদিন নিজে এবং নিজের সঙ্গে