পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১১২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১০৬
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

মতো, বৃন্তের মতো, পাপড়ির মতো, মেঘের ঘটার মতো, জলের ধারার মতো। রসের বাধা জন্মায় যাতে এমন সব বস্তু কবিরা টেনে ফেলে দেন,–নিরঙ্কুশাঃ কবয়ঃ। লয়ে লয়ে না মিল্লে কবিতা হ’ল না, এ কথা যার একটু কবিত্ব আছে সে বলবে না; তেমনি আকারে আকারে না মিল্লে ফটোগ্রাফ হল না বলতে পারি, কিন্তু ছবি হল না একথা বলা চলে না। ‘মহাভারতের কথা অমৃত সমান’ শুনতে বেশ লাগলো, ‘ছেলেটি কার্তিকের মতো’ দেখতে বেশ লাগলো, কিন্তু কবিতা লিখলেই কি কাশীদাসী সুর ধরতে হবে, না ছেলে আঁকতে হলেই পাড়ার আদুরে ছেলের anatomy কাপি করলেই হবে? গণেশের মূর্তিটিতে আমাদের ঘরের ও পরের ছেলের anatomy যেমন করে ভাঙা হয়েছে তেমন আর কিছুতে নয়। হাতী ও মানুষের সমস্তখানি রূপ ও রেখার সামঞ্জস্যের মধ্য দিয়ে একটা নতুন anatomy পেয়ে এল, কাযেই সেটা আমাদের চক্ষে পীড়া দিচ্ছে না, কেন না সেটা ঘটনা নয়, রচনা। আরব্য-উপন্যাসের উড়ন্ত সতরঞ্চির কল্পনা বাস্তবজগতে উড়োজাহাজ দিয়ে সপ্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কি আমাদের কাছে নগণ্য হয়েছিল, না, অবাধ কল্পনার সঙ্গে গল্পের ঠাট মিলছে কিন্তু বিশ্বরচনার সঙ্গে মিলছে না দেখে’ গালগল্প রচনার বাদশাকে কেউ আমরা দুষেছি? প্রত্যেক রচনা তার নিজের anatomy নিয়ে প্রকাশ হয়; ঠাট বদলায় যেমন প্রত্যেক রাগরাগিণীর, তেমনি ছাঁদ বদলায় প্রত্যেক ছবির কবিতার রচনার বেলায়। ধর যদি এমন নিয়ম করা যায় যে কাশীদাসী ছন্দ ছাড়া কবিরা কোনো ছন্দে লিখতে পারবে না—যেমন আমরা চাচ্ছি ডাক্তারি anatomy ছাড়া ছবিতে আর কিছু চলবে না—তবে কাব্যজগতে ভাবের ও ছন্দের কি ভয়ানক দুর্ভিক্ষ উপস্থিত হয়,—সুরের বদলে থাকে শুধু দেশজোড়া কাশী আর রচয়িতার বদলে থাকে কতকগুলি দাস। কাযেই কবিদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে ‘কবয়ঃ নিরঙ্কুশাঃ’ বলে’, কিন্তু বাস্তবজগৎ থেকে ছাড়া পেয়ে কবির মন উড়তে পারবে যথাসুখে যথাতথা, আর ছবি আট্‌কে থাকবে ফটোগ্রাফারের বাক্সর মধ্যে—জালার মধ্যে বাঁধা আরব্য-উপন্যাসের জিন্-পরীর মতো সুলেমানের সিলমোহর আঁটা চিরকালই, এ কোন্‌দেশী কথা? ইউরোপ, যে চিরকাল বাস্তবের মধ্যে আর্টকে বাঁধতে চেয়েছে সে এখন সিলমোহর মায় জালা পর্যন্ত ভেঙে কি সঙ্গীতে, কি চিত্রে, ভাস্কর্যে,