পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অন্তর বাহির
১২৫

ইচ্ছা করলে শিল্পী বর্জন করতে পারেন কিন্তু মন্ত্রকে ঠেলে ফেলা চলে না।

“যথা সুমেরুঃ প্রবরো নগানাং যথাণ্ডজানাং গরুড়ঃ প্রধানঃ।
যথা নরাণাং প্রবরঃ ক্ষিতীশ স্তথা কলানামিহ চিত্রকল্পঃ॥”

 খণ্ড খণ্ড অনেকগুলো সত্য দিয়ে এটা বলা হ’লেও সমস্ত শ্লোকটা কলাবিদ্যার সম্বন্ধে একটা প্রকাণ্ড অহমিকা নিয়ে মত আকারে প্রকাশ পাচ্ছে। যে রাজভক্ত তার কাছে ক্ষিতীশচন্দ্র হলেন শ্রেষ্ঠ কিন্তু এমন অনেক ফটিকচাঁদ আছে রাজাও যার পায়ে মাথা লোটায়। এ ছাড়া চিত্রকলাই সকল কলার শ্রেষ্ঠ কলা একথা একেবারেই অসত্য কেননা গীতকলা কাব্যকলা নাট্যকলা এরা কেউ কমে যায় না! মতের মধ্যে এই একটা মস্ত ফাঁক আছে, মন্ত্রে কিন্তু তা নেই দেখ—শরীরেন্দ্রিয় বর্গস্য বিকারাণাং বিধায়কা ভাবাঃ বিভাবজনিতশ্চিত্তবৃত্তয় ঈরিতাঃ—এ সত্যের দ্বারায় পরখ করা জিনিষ, এ মন্ত্র-শিল্পীকে সুমন্ত্রণ দিচ্ছে ভাব ও তার আবির্ভাব সম্বন্ধে, অতএব এতে কারু দুইমত হবার কথা নয় কিন্তু “দৌর্বল্যং স্থূলরেখত্বং অবিভক্তত্বমেব চ। বর্ণানাং সঙ্করশ্চাত্র চিত্রদোষা প্রকীর্ত্তিতাঃ॥” এটা একটা লোকের মত, মন্ত্রের মতো খুব সাচ্চা জিনিষ নয়, এর মধ্যে অনেকখানি সত্য এবং মিথ্যাও লুকিয়ে আছে, দৌর্বল্য, স্থূলরেখত্ব অবিভক্তত্ব বর্ণসঙ্করত্ব হ’ল চিত্রদোষ কিন্তু কিসের দৌর্বল্য কিসের অবিভক্তত্ব টীকা না হলে বোঝা দুষ্কর, তা ছাড়া এসব দোষ যে চিত্রে কোন কাযে আসে না তা নয় এ সবই চাই চিত্রে, বর্ণসঙ্কর না হ’লে মেঘলা আকাশ সূর্যোদয় এমন কি কোন কিছুই আঁকা চলে না, অমিশ্র বর্ণ সে এক ছবি দেয়। মিশ্রবর্ণ সে অন্য ছবি দেয়, ফুলের বোঁটার টান দুর্বল গাছের গুঁড়ির টান সবল দুর্বল স্থূল, সূক্ষ্ম সব রেখা সব বর্ণ ভাব ভঙ্গি মান পরিমাণ সুর এমন কি বেসুর তা তো অনেক সময় দোষ না হয়ে গুণই হয়ে ওঠে গুণীর যাদুমন্ত্রে।

 এইবার শিল্পের একটা মন্ত্র দেখ, পরিষ্কার সত্য কথা—“রূপভেদা: প্রমাণানি ভাবলাবণ্যযোজনম্‌॥ সাদৃশ্যং বর্ণিকাভঙ্গ ইতি চিত্রং ষড়ঙ্গকম॥” ভারতবর্ষ থেকে ওদিকে আমেরিকা কোন দেশের কোন চিত্রবিদ এর উল্টো মানে বুঝে, ভুল করবে না, কেননা চিত্রকরের কারবারই হল এই ছটার কোনটা কিম্বা এর কোন কোনটাকে নিয়ে। একটা চিত্রে