পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩০
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

মানে দিতে হবে গাছের জড় বা শিকড়; জড় সে জগৎকে আঁকড়ে রয়েছে, খুব কাজের জিনিষ কল্পনা এবং রচনার রস যেমনি শিকড়ে লাগলে আমনি ডাল পাল বিস্তার না করে সে থাকতে পারলে না। নিশ্চল মাটির তলায় অন্ধকার ছেড়ে সে প্রকাশিত হ’ল আলোর জগতে, ভাবের বাতাস লাগলো তার দেহে, ফুটলো পাতা হ’য়ে ফুল হ’য়ে ফল হ’য়ে, হাওয়ায় দুল্লো রূপের ডালি, রসের রচনা বীজের মধ্যে যতটা বস্তু এবং শিকড়ের মধ্যে যতটা সঞ্চয় ছিল তাই নিয়ে! বাইরেটা এবং বাইরের স্মৃতিটা শিল্পীর ভাণ্ডার, শিল্পীর কল্পনালক্ষ্মী সেখান থেকে এটা ওটা সেটা নিয়ে নানা সামগ্রী বানিয়ে পরিবেশন করেন। মূর্খেরাই কেবল এই ভাণ্ডারকে হোটেল এবং দোকান বলে’ ভ্রম করে যেখানে ready-made সমস্ত পাওয়া যায়— “People regard Nature as a store-house of ready-made ornaments instead of a book of reference for ideas and principles to be thought out with diligence and applied with care. Ready-made ornaments are too often like ready-made clothes badly fitting and ill-suited to the subject.–Frank Jackson.

 যে গড়ছে বা আঁকছে তার মনের কল্পনার সংস্পৰ্শ-শূন্য ছবি কলে এঁকেছে মানুষ, হাতেও গড়েছে কেষ্টনগরের পুতুল,—ঘটনার যথাযথ প্রতিরূপ। শিল্পের যতগুলো কৌশল, রূপ, প্রমাণ, ভাবলাবণ্য, সাদৃশ্য, বর্ণিকাভঙ্গ, anatomy, perspective, shade-and-light, depth, space, movement ইত্যাদির নিয়মাবলী নির্ভুল ও সম্পূর্ণভাবে মেনে চল্লো কেষ্টনগরের কারিগরের গড়নটি কিন্তু এই বাস্তবের নিয়ম মেনে চলার ফলে একটা গ্রীক প্রস্তরমূর্তির সঙ্গে কি ঘুরণী পাড়ার মাটির পুতুলটিকে সমান করে তুলতে পারলে, না এইটেই প্রমাণ করলে যে মানুষ চেষ্টা করলে কলের চেয়ে নির্ভুল ও পরিপূর্ণ নকল নিতে পাকা হয়ে উঠতে পারে? বাস্তবের দিকে যেমন দেখা গেল, কল্পনাশূন্য বাস্তব ছবি নেওয়া চল্লো বহির্জগতের, তেমনি অন্তর্জগতের বাস্তবম্পৰ্শ-শূন্য নিছক কল্পনার একটা কিছু ধরবার চেষ্টা করা যাক। কিন্তু কোথায় তেমন জিনিষ? সত্যপীরের মাটির ঘোড়া, কালীঘাটের পট, নতুন বাঙলার আমাদের ছবি, পুরোণো বাংলার দশভুজা এর একটাও