পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

শিল্পলক্ষ্মীর কাছে তাঁদের চাওয়া বাদসার মতো চাওয়া—একেবারে ঢাকাই মস্‌লিন, তাজমহলের ফরমাস; জগতের মধ্যে দুর্লভ যা, তারই আবদার! বৌদ্ধ-ভিক্ষু, তাঁরা থাকবেন; শুধু পাহাড়ের গুহা মনঃপূত হলো না, তাদের জন্য রচনা হয়ে গেল অজন্তাবিহার—শিল্পের এক অদ্ভুত সৃষ্টি—ভিক্ষুরা যেখানে জন্তুর মতো গুহাবাস করবেন না, নরদেবের মতো বিহার করবেন!

 রমণীর শিরোমণি তাজ, দুনিয়ার মালিক সাহাজাহান তার স্বামী, সোহাগ-সম্পদ সে কি না পেয়েছিল, কিন্তু তাতেও তো সে তৃপ্ত হলো না, সাহাজাহানের অন্তরে ছিল যে শিল্প, তারই শেষ-দান সে চেয়ে নিলে—দুজনের জন্যে একটি মাত্র কবর, যার মধ্যে দুজনে বেঁচে থাকবে, এমন কবর যার জোড়া ত্রিভুবনে নেই। একেই বলে চাওয়ার মতো চাওয়া, দেওয়ার মতো দেওয়া। কোনো শিল্প নেই, কোনো রস নেই—এটা সেকালের লোক কল্পনা করতে পারেনি, তাদের শিল্পসামগ্রীগুলোই তার প্রমাণ। কিন্তু আজকালের-আমরা কি পেরেছি, এখনও পারছি, আমাদের ঘর-বার চারিদিক তার সাক্ষ্য দিচ্ছে। শিল্পে অধিকার আমরা কি মুখের বক্তৃতায় পাব? মনের মধ্যে যে রয়েছে আমাদের—যেন-তেন-প্রকারেণ পয়সা, কোনো-রকমে যা-তা করে লীলা সাঙ্গ করা! এ ভাবে চল্লে হাতের মুঠোয় কেউ শিল্পকে ধরে দিলেও তো আমরা সেটা পাব না। খোঁজই নেই শিল্পের জন্যে, কোথা থেকে পাব সেটা!

 কি দিয়ে ঘর সাজালেম, কি ভাবেই বা নিজে সাজলেম, আমোদই বা হলো কেমন, পঞ্চাশ-ষাট-সত্তর বছরের জীবনটা কাটলই বা কেমন করে—এ খোঁজের তো প্রয়োজনই আছে বলে মনে করি না; মনের মধ্যে যে লুকিয়ে রয়েছে যেমন-তেমন ভাব,—অল্পেই মন ভরে গেল যেমন-তেমনে! শুধু অল্প হলে তো কথা ছিল না; সেটা বিশ্রী হবে কেন? মাসে বার-পঁচিশ বায়স্কোপ-রঙ্গমঞ্চের রঙ্গ এবং ফুটবলের ভিড়, ঘোড়দৌড়ের জুয়ো এবং দু’চারটে স্মৃতি-সভার বার্ষিক অধিবেশন ও যতটা পারা যায় বক্তৃতা—এই হলেই কি চুকে গেল সব ক্ষুধা, সব তৃষ্ণা? ধর ক্ষুধা মেটানো গেল—সোনালী গিল্টি-করা মার্ব্বেল-মোড়া বৈদ্যুতিক আলোতে ঝক্‌মক্‌ হোটেলের খানা-কামরায়, এবং তৃষ্ণাও মেটালেম মদের বোতলে; কিন্তু তারপর কি? মনের খোরাক যে মধু, মনকে তা দেওয়া হল না—