পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
শিল্পে অনধিকার

পেয়ালা ভরে। মন রইলো উপবাসে। দিনে-দিনে মন হতবল, হতশ্রী হলো, স্ফূর্তি হারালে। তারপর একদিন দেখলেম, আনন্দময়ের দান আনন্দ দেবার ক্ষমতা, আনন্দ পাবার ইচ্ছা—সবই হারিয়েছি; সৌন্দর্যবোধ, আনন্দবোধ—সবই আমাদের চলে গেছে। বাতাস যে কি বলছে তা বুঝতে পারছি নে, ফুলন্ত পৃথিবী কি সাজে যে সেজে দাঁড়াচ্ছে ঘরের সামনে তাও দেখতে পাচ্ছিনে। আকাশে আলো নেই, অন্তরে তেজ নেই, আশা নেই, আনন্দ নেই, শুকনো জীবন ঝুঁকে রয়েছে রসাতলের দিকে! এটা যে আমি কেবল অযথা বাক্‌জাল বিস্তার করে ভয় দেখাচ্ছি তা নয়; এই ভয় সত্যিই আমাদের মধ্যে এসে উপস্থিত হয়েছে। এই ভয় থেকে পরিত্রাণের উপায় করতেই হবে,—শিল্পীর অধিকার আমাদের পেতেই হবে, না হলে কিছুই পাব না আমরা। ভারতবর্ষের প্রাচীন জ্ঞানভাণ্ডার, শিল্পভাণ্ডার অতুল ঐশ্বর্যে কালে-কালে ভর্তি হলো সত্যি, কিন্তু আজকের আমাদের হাল-চাল দেখে কেউ কি বলবে আমরাই সেই অফুরন্ত ভাণ্ডারের যথার্থ উত্তরাধিকারী? এই হতশ্রী, নিরানন্দ, অত্যন্ত অশোভন ভাবে নিঃস্ব, কেবলি হাত-পাতা আর হাত-জোড় ছাড়া হাতের সমস্ত কাজ যারা ভুলে বসেছি, সূর্যের কণা দিয়ে গড়া কোণার্ক মন্দির, প্রেমের স্বপন দিয়ে ধরা তাজ—এগুলো কি আমাদেরই? ভারতবাসী বলেই কি এগুলো আমাদের হলো? তাতো হতে পারে না। এই সব শিল্পের নির্মিতি, এদের নিজের বলবার অধিকার অর্জন করবো শুধু সেই দিন, যেদিন শিল্পকে আমরা লাভ করবো, তার পূর্বে তো নয়। শিল্প যেদিন আমাদের হবে, সেদিন জগৎ বলবে এ সবই তো তোমাদের!—আমাদের শিল্পও তোমাদের। আমাদের দেশের রসিকরা বলেছেন শিল্পকে ‘অনন্যপরতন্ত্রা’। শিল্পের সাধনা যে করে, কি দেশের কি বিদেশের প্রাচীন নতুন সব শিল্পের ভোগ তারই কপালে ঘটে। আমার দেশ বলে ডাক দিলে দেশটা হয়তো বা আমার হতেও পারে কিন্তু দেশের শিল্পের উপরে আমার দাবি যে গ্রাহ্য হবে না, সেটা ঠিক। তা যদি হতো তবে কালাপাহাড় থাক্‌লে, সেও আজ আমাদের সঙ্গে ভারতশিল্পের চূড়া থেকে প্রত্যেক পাথরটির উপরে সমান দাবি দিতে পারতো; কেন না কালাপাহাড় ছিল ভারতবাসী এবং আমাদেরই মত ভাঙ্‌তে পটু, গড়তে একেবারেই অক্ষম; শুধু কালাপাহাড় ভেঙ্গে গেছে রাগে আর