পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫০
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

কিছু—দেশভেদে কালভেদে শিল্পীর কল্পনাভেদে পূজকের অন্তর্দৃষ্টিভেদে, তখন সম্পূর্ণ ছাড়পত্র দেওয়া হ’ল—

“প্রতিমায়াশ্চ যে দোষা হ্যর্চকস্য তপোবলাৎ।
সর্ব্বত্রেশ্বরচিত্তস্য নাশং যান্তি ক্ষণাৎ কিল॥”

এই ফাঁক পেয়ে দেশের শিল্প হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো, বিচিত্র হয়ে উঠলো মন্দিরে মঠে।

 সেকালে শাস্ত্রের নিয়মমতো গড়ার যে সব ব্যাঘাত পরে পরে এসেছিল, একালেও যদি শিল্পশাস্ত্রের অনুশাসনে আমরা শিল্পীদের বাঁধতে চলি তবে ঠিক সেকালের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবেই হবে। অনেকে বলেন ইতিহাসের না হয় পুনরাবৃত্তি হ’লই, তাতে করে যদি তখনকার art ফিরে পাই তো মন্দ কি! এ হবার জো নেই, যা গেছে তা আর ফেরে না; তার নকল হ’তে পারে, ছোট ছেলে ঠাকুরদাদার হুবহু নকল দেখিয়ে চল্লে যেমন হাস্যকর অশোভন ব্যাপার হয় তাই হবে, গোলদীঘির অজন্তা বিহার হবে, গড়ের মাঠের খেলনা তাজমহল হবে। কুঁড়ে ঘর আর বদলালো না কেননা সে এমন সুন্দর করে সৃষ্টি করা যে তখনো যেমন এখনো তেমনি তাতে স্বচ্ছন্দে বাস চল্লো। কিন্তু সেকালের প্রাসাদে একালে আমাদের বাস অসম্ভব, আলো বাতাস বিনা হাঁপিয়ে মারা যাবো পাথর চাপা পড়ে'। পুরাকালে আমাদের যাঁরা শিল্প ও শিল্পরসিক ছিলেন তাঁরা ক্ষুদ্রচেতা ছিলেন না। তাঁরা নিয়ম করতেন নিয়ম ভাঙ্তে‌ন তাঁদের মধ্যে শিল্পী ও শিল্প দুই ছিল, কাযেই তাঁদের ভয় ছিল না। এখন আমাদের সেই সেকালের কোন কিছুতে একটু আধটুও অদল বদল করতে ভয় হয় কেননা নিজের বলে আমাদের কিছুই নেই, সেকালের উপরে আগাছার মতে আমরা ঝুলছি মাত্র, সেকালই আমাদের সর্বস্ব! কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে এক আফ্রিকার মূর্তিশিল্প যেমন ছিল তেমনি নিষ্ক্রিয় অবস্থাতেই আছে, সেকালকে সে ছাড়াতে একেবারেই পারেনি।

 সেকাল ছেড়ে কোন শিল্প নেই এটা ঠিক, কিন্তু একাল ছেড়েও কোন শিল্প থাকতে পারে না বেঁচে এটা একেবারেই ঠিক। গাছের আগায় নতুন মুকুল গাছের গোড়ায় অতীতের অন্ধকারে তার প্রথম বীজটর সঙ্গে যে ভাবে যুক্ত রয়েছে সেভাবে থাকাই হ’ল ঠিক ভাবে থাকা; আমের নতুন মঞ্জরীর সঙ্গে পুরাতন বীজটার চেহারার সাদৃশ্য মোটেই