পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিল্পশাস্ত্রের ক্রিয়াকাণ্ড
১৫৩

মসলার জন্য সম্পূর্ণভাবে সেকালের উপর নির্ভর করে' চলতে বাধ্য,— নতুন প্রথায় কিন্তু প্রত্নতত্ত্ব চর্চা চল্লো। শিল্পও তেমনি সেকাল, একাল ও ভবিষ্যকালের যোগাযোগে বর্ধিত হয়ে চল্লো, কোনো এককালের ক্রিয়া কলাপের মধ্যে তাকে ধরে' রাখবার উপায় রইলো না। প্রাচীন ভারতের শিল্প শুধু নয়—তখনকার আচার ব্যবহার সমুদয় কি ছিল কেমন ছিল তা প্রাচীন পুঁথির মধ্যে ধরা রইলো বলেই শাস্ত্র পুরাণ ইত্যাদি পড়া। কিন্তু পড়ে' জানা হ’ল একরকম শিল্পকে না জানাই। অজন্তা চিত্র কেমন এবং তার বর্ণ দেবার, লাইন টানার মাপজোখের হিসেবের ফর্দ পড়ে' গেলে ছবিটা দেখার কাজ হয় না। প্রাচীন ভারতের শিল্পের যে দিকটা প্রত্যক্ষ হচ্ছে বর্তমানে—মন্দির মঠ মূর্তি ছবি কাপড়-চোপড় তৈজসপত্র ইত্যাদিতে তা থেকেই বেশী শিক্ষা পায় শিল্পী। এ হিসেবে একটা প্রাচীন মূর্তির ফটোগ্রাফও বেশী কাযের হ’ল শিল্পকে বোঝাতে, আসল মূর্তিটা চোখে দেখলে তো কথাই নেই। ব্রজমণ্ডলে কি কি আছে ও ছিল, সেটা ব্রজপরিক্রমা পড়ে' গেলেও ব্রজমণ্ডল দেখা হ’ল না, জানা হ’ল না—যতক্ষণ না তার ফটো দেখছি বা সেখানে তীর্থ দর্শনে যাচ্ছি। না দেখা ব্রজভূমি যেটা সম্পূর্ণ কল্পনার জিনিস তার মূল্য বড় কম নয় art এর দিক দিয়ে। কিন্তু শাস্ত্রমতো ব্রজভূমির একটা বর্ণনা বা symbol দু'খানা হরিচরণ যদি হয়, তবে সেটা দেখে কি বুঝবো ব্রজের শোভা? নিছক প্রতীক নিয়ে তন্ত্রসাধন চলে,—শিল্প সাধনা তার চেয়ে বেশী কিছু চায়। সাধকের হিতার্থে শাস্ত্রমতো রূপ কল্পনা হ’ল অরূপের, যখন তখন একখণ্ড শিলা একটা যন্ত্র হ’লেই কায চলে গেল। কিন্তু শিল্প এমন নিছক প্রতীকমাত্র হয়ে বসে থাকতে পারে না। অনেকখানি চোখের দেখার মধ্যে না ধরলে দেবতাকে দেখানই সম্ভব হয় না। অথচ দেবতাকে মনুষ্যত্বের কিছু বাহুল্য না দিলেও চলে না। এই কারণে নানা মূর্তির নানা মুদ্রা হাত মাথা ইত্যাদির প্রাচুর্য দরকার হ'য়ে পড়লো। শিল্পশাস্ত্র নিখুঁত করে' তার হিসেব দিলেন। কিন্তু এতেও পাথর দেবতা হয়ে না উঠে মনুষ্যেতর কিছু হবার ভয় গেল না,——তখন শিল্পীর শিল্পজ্ঞান যেটা তার নিজস্ব, তার উপর নির্ভর করা ছাড়া উপায় রইলো না।

 এই যে শিল্পজ্ঞান, এ কোথা থেকে আসে শিল্পীর মধ্যে তা কে জানে? তবে শুধু শাস্ত্রকে মেনে চলে' কিম্বা শাস্ত্র পড়ে' সেটা আসে না

O. P. 14–20