পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।



১০
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

আমরা ভাঙছি বিরাগে—এই মাত্র তফাৎ। কাব্যকলা, শিল্পকলা, গীতকলা,—এ সবাইকে ‘রস-রুচিরা’ বলে কবিরা বর্ণন করেছেন এবং তিনি হ্লাদৈকময়ী—আনন্দের সঙ্গে ওতপ্রোত হয়ে আছেন; আর তিনি অনন্যপরতন্ত্রা—যেমন-তেমন যার-তার কাছে ত তিনি বাঁধা পড়েন না; রসিক, কবি—এদেরই তিনি বরণ করেন এবং এদেরই তিনি সহচরী সঙ্গিনী সবই। আমরা যারা এক আফিসের কাজ এবং সেয়ারের কাজ ও তথাকথিত দেশের কাজ প্রভৃতি ছাড়া আর কিছুতেই আনন্দ পাইনে, রস পাইনে, পাবার চেষ্টাও করিনে, তাদের কাছ থেকে শিল্প দূরে থাকবেন, এতে আশ্চর্য কি? “অলসস্‌স কুতো শিল্পং অসিপ্পস্‌স কুতোধনং!”

 নিজের শিল্প থেকে ভারতবাসী হলেও আমরা কতখানি দূরে সরে পড়েছি এবং বিদেশী হলেও তারা এই ভারতশিল্পের রত্নবেদীর কতখানি নিকটে পৌঁছে গেছে তার দুটো-একটা উদাহরণ দিচ্ছি। জাপানের শ্রীমৎ ওকাকুরা শেষ বার এদেশে এলেন, শঙ্কট রোগে শরীর ভগ্ন কিন্তু শিল্পচর্চা, রসালাপের তাঁর বিরাম নেই। সেই বিদেশী ভারতবর্ষের একটি তীর্থ দেখতে এসেছেন—দূর প্রবাস থেকে নিজের ঘরের মৃত্যুশয্যায় আশ্রয় নেবার পূর্বে একবার জগন্নাথের মন্দিরের ভিতরটা কেমন শিল্পকার্য দিয়ে সাজানো দেখে যাবেন এই তাঁর ইচ্ছা, আর সেই কোণার্ক মন্দির যার প্রত্যেক পাথর শিল্পীর মনের আনন্দ আর আলো পেয়ে জীবন্ত হয়ে উঠেছে, সেটাও ঐ সঙ্গে দেখে নেবার তাঁর অত্যন্ত আগ্রহ দেখলেম। জগন্নাথের ডাক পড়েছে আমার বিদেশী শিল্পীভাইকে; কিন্তু জগন্নাথ ডাকেন তো ছড়িবরদার ছাড়ে না, ভারতের বড়লাটকে পর্যন্ত বাধা দেয় এত বড় ক্ষমতা সে ধরে! তাকে কি ভাবে এড়ানো যায়? শিল্পীতে-শিল্পীতে মন্ত্রণা বসে গেল। চুপি চুপি পরামর্শটা হলো বটে কিন্তু বন্ধু গেলেন জগবন্ধু দর্শন করতে দিনের আলোতে রাজার মতো। এইটেই ছিল বিশ্বশিল্পীর মনোগত;—শিল্পী বিদেশী হলেও তার যেন গতিরোধ না হয় দর্শনের দিনে। দ্বার খুলে গেল, প্রহরী সসম্মানে একপাশ হলো, জাপানের শিল্পী দেখে এলেন ভারতের শিল্পীর হাতে-গড়া দেবমন্দির, বৈকুণ্ঠ, আনন্দবাজার, মায় দেবতাকে পর্যন্ত। এই পরমানন্দের প্রসাদ পেয়ে বন্ধু দেশে চল্লেন অক্ষত শরীরে। তাঁর বিদায়ের দিনের শেষ-কথা আমার এখনও মনে