পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৬
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

হবে, পূর্বপুরুষদের সঞ্চয় ও ঐশ্বর্য অন্যে ভোগ করে' বড় হ'তে থাকবে? দেশের স্থাপত্য রক্ষার আইন তাড়াতাড়ি না হ’লেও ও-জিনিষ সহজে দেশ থেকে নড়তো না, সময় লাগতো। কিন্তু এই সব ছোটখাটো শিল্প সামগ্রী,—চমৎকার কাঁথা, চমৎকার সাড়ী, মন-ভোলানো খেলনা, চোখ-ঠিকরানো গহনাগাটি ঘটিবাটি অস্ত্রশস্ত্র এবং রামধনুকের প্রতিদ্বন্দ্বী চিত্রশালা উড়ে' চলেছে বিদেশে। যদি এখন থেকে দেশে এদের রাখার চেষ্টা আইনের দ্বারা হ’ক পয়সার দ্বারা হ’ক না করা হয় তবে শীঘ্রই শিল্পক্রিয়া আমাদের মধ্যে বন্ধ হ’য়ে যাবে। থাকবে শুধু বিদেশ যেটুকু ভিক্ষা দেবে,—বিনা রোজগারে বিনা খাটুনির পাওনাটা।

 শিল্পী হ’ল ক্রিয়াশীল, শিল্প চাইতো ক্রিয়া করা চাই। তার প্রথম ক্রিয়া দেশেরটাকে দেশে ধরে' রাখা, দ্বিতীয় ক্রিয়া বিদেশেরটাকে নিজের করে' নেওয়া, তৃতীয় ক্রিয়া শিল্প সম্বন্ধে বক্তৃতা নয়,—করে' চলা ছবি মূর্তি নাচ গান অভিনয় এমনি নানা ক্রিয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেটা একেবারেই করা নয় সেইটেই আগে সুরু করতে হ’ল—বক্তৃতা দিতে হ'ল। যেগুলো দরকারী প্রথম শিক্ষার পক্ষে—ছবির মূর্তির একটা যথাসম্ভব সংগ্রহ, তা হ’ল না এ পর্যন্ত। ছবি সম্বন্ধে বই যা শেখাবে, বক্তৃতা যা বোঝাবে, তার চেয়ে ঢের পরিষ্কার ঢের সহজ করে’ বোঝাবে সত্যিকার ছবি—এটা কবে বোঝাতে পারবো লোককে তা জানিনে।

 আমাদের ছবি মূর্তি ইত্যাদির একটা মস্ত সংগ্রহ চৌরঙ্গীতে রয়েছে। কিন্তু সেটার নাম আমরা দিয়েছি যাদুঘর। কোন্‌ দিন সেটা ফুঁয়ে উড়ে যাবে পূব থেকে পশ্চিমে তার ঠিক নেই। তখন আমাদের ঘর শূন্য। এই ভেবেই ছবি মূর্তি সাধ্যাতীত ব্যয় করেও ধরে রাখলেম, দুচার জন শিল্পী তা দেখে শিখলে, কাযে এল দুচার দিন, তারপর এল দুঃসময়, চল্লো সব উড়ে বিদেশে—রূপো সোনার কাঠির স্পর্শে। এ আমি দেখতে পাচ্ছি—রইলো না, দেশের শিল্প দেশে রইলো না। বিদেশী এলো, চোখে ধূলো দিয়ে নিয়ে গেল রাতারাতি ভাণ্ডার লুঠ করে’। সকালে দেখি আমাদের ঘর শূন্য ভাণ্ডার খালি শুধু শিল্পী বসে' একটা ভূয়ো কৌলীন্য মর্যাদা নিয়ে অথর্ব। আমরা বসে’ রয়েছি বাইরের দিকে চেয়ে! বাইরেটাও যে কত সুন্দর তার নীল আকাশ সবুজ বন আলো-আঁধার পশু-পক্ষী কীট-পতঙ্গ ফুল-ফল নিয়ে, তাও বুঝতে পারছিনে। মন ভাবছে না, হাত পা চলছে