পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিল্পীর ক্রিয়াকাণ্ড
১৫৯

 ক্রিয়ার বা techniqueএর কৃত্রিমতা ও অকৃত্রিমতা ভেদ নিয়ে কতক শিল্প পড়লো fine artএর কোঠায়, কতক শিল্প রইলো craftsএর কোঠায়। মনের আনন্দে গলা ছেড়ে' যখন গান গাওয়া, তখন সেটা Granophoneএ কালোয়াতি গাওনার থেকে অনেকখানি বড় জিনিষ। আবার যখন গাইয়ে এক এক সময় নিজের গলাটাকে যন্ত্রের সঙ্গে এমন বেঁধে ফেল্লে যে নিজেই একটা Granophone হ’য়ে উঠলো সে তখন artist রইলো না—technician হ'ল মাত্র। ক্রিয়া বা techniqueকে ছাপিয়ে চলা হ’ল সুন্দর চলা। অকৃত্রিমভাবের চলার art বড় কম art নয়। নর্তন ক্রিয়ার মধ্যে, অভিনয়ের মধ্যে, সচরাচর চলা বলার থেকে অনেক বিষয়ে তফাৎ না করলে ভাল নাচ ভাল অভিনয় হয় না। কিন্তু এই দুই কলারই মূলমন্ত্র হ’ল অকৃত্রিমতা অর্থাৎ ক্রিয়ার যান্ত্রিকতা লুকিয়ে চলা বলা। সব কর্মের সঙ্গেই তার নিষ্পাদনের প্রক্রিয়া রয়েছে। মনের মধ্যে যা রয়েছে নানা ক্রিয়া ধরে সেটা যতক্ষণ প্রকাশ না হচ্ছে ততক্ষণ সে মনেই আছে বাইরে নেই। ব্যাকরণের অভিধানের নান। ক্রিয়া কর্ম বিশেষ্য বিশেষণ ধরে' মাসিক পত্রে মস্ত একটা সমালোচনা বা প্রবন্ধ বার হ’ল, তবেই জানলেম অমুক লোকটা অমুকের উপর চটেছে বা খুসি আছে, কি এ লোকটা এই ভাবছে ও লোকটা তাই ভাবছে।

 ছবিতেও রং রেখার কতকগুলো ক্রিয়া ধরে' তবে চিত্রকরের মনের কথা বার হয়ে এল। রং রেখার এক রকম ক্রিয়া করা গেল—ছবিটা হ’ল landscape, অন্য প্রক্রিয়ায় হ’ল portrait; আর এক রকমে রং রেখার ক্রিয়া করলেম, সেটা হ’ল caricature,—এক ক্রিয়ার ছবি দেগে লোককে কাঁদানো গেল, অন্য রকমে লোককে হাসানো গেল। তবে এও দেখছি artist যা করলে দর্শকের উপর তার প্রতিক্রিয়া হ’লই না, কিম্বা উল্টো হ’ল; যেখানে হাসা উচিত সেখানে হয়তো দর্শক কাঁদলে। প্রদর্শকের ক্রিয়ার অপকর্ষ কিম্বা দর্শকের বুদ্ধির অভাবও এর কারণ হতে পারে। বিদ্যুৎ চালনা করলে একটা মরা মাছও দেখেছি চমকে উঠলো, কিন্তু এক টুকরো পাথর সে সাড়াই দিলে না! সুতরাং পাত্রভেদে দর্শক শ্রোতা ও ভোক্তার ওপরে কলাসমূহের প্রতিক্রিয়া এক এক রকম হ’য়ে থাকে। এখানে যে ক্রিয়া করছে তার কোন হাত নাই। তার দেখবার বিষয় হচ্ছে যে কর্ম সে করলে তার উপযুক্ত ক্রিয়া সে