পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৪
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

সম্পূর্ণ করে তুলছেন কাজ, কিম্বা অসমাপ্ত অবস্থায় ফেলে রেখে নতুন পরীক্ষায় অগ্রসর হয়েছেন। ক্রিয়া থেকে নানা কলার উৎপত্তি হ’য়ে চলেছে যখন সেই সময়ে ক্রিয়ার সার্থকতার উপরে মানুষের জীবন যাত্রার অনেকখানি নির্ভর করতো। কর্ষণ-ক্রিয়া হনন-ক্রিয়া থেকে হাঁড়িকুড়ি অস্ত্রশস্ত্র কাপড়-চোপড় সমস্তই করে' তুলতে হ’ত কাযে হাত পাকিয়ে; করে' শিখতো, পড়ে শিখতো, না দেখে শিখতো, ঠেকে শিখতো নিজেরা। পরের দেখা পরের শোনা নিয়ে কাযের মানুষ হ'য়ে ওঠা, কিম্বা পড়ে পাশ করা এখন হয়েছে। তখন ক্রিয়া করে' কাযের মানুষ হ’ত, বই মুখস্থ করে' নয়। কাযেই তখন শাস্ত্র ছিল না। এখন পড়ার যুগে পুঁথির দরকার হয়ে পড়লো; নানা কাজের নানা manual বা ক্রিয়াপদ্ধতির পর পর রচনা হ’তে থাকলো।

 শিল্পের ইতিহাসের আদি কথা শিল্পক্রিয়ার দ্বারা মানুষ শিল্পের নানা দিকের নানা সন্ধান নিয়ে চলেছে ভাঙ্তে‌ গড়তে, মধ্য যুগের কথা নানা শাস্ত্রে নানা কথার সঙ্গে শিল্পের কথাও মানুষ যতটা পারছে লিখে লিখে সংগ্রহ করছে, এবং খুব আধুনিক কথা হচ্ছে যখন রাজাদের সভায় পণ্ডিত এবং কবি ও শিল্পী দুজনেই এসে পড়েছে এবং বিশেষ বিশেষ কলার উন্নতির বা অবনতির সূত্রপাত হচ্ছে লোকমতের গতি বশে। শিল্পীর অভিমতের উপরে এই সময় শাস্ত্রমত লোকমত প্রাধান্য লাভ করে' এই ভাল এই মন্দ এমনি একটা করে’ গণ্ডি টেনে দিলে এবং শিল্পের ক্রমবিকাশ বিচিত্র গতি বন্ধ হ’য়ে জড়তা উপস্থিত হ’ল শিল্পের ধারায়। এর প্রত্যক্ষ প্রমাণ সব দেশের সব শিল্পের মধ্যে কিছু কিছু বর্তমান আছে। যে মূর্তি গড়বে সে একই ছাঁদে একই প্রক্রিয়ায় মূর্তি গড়ে চল্লো। পুরুষানুক্রমে একই জিনিষে বুদ্ধিবৃত্তি চালিত হ’তে হ'তে শিল্পীরা এ সময়ে একটা অত্যাশ্চর্য দক্ষতা পেলে এক এক কলায়। কিন্তু এ ভাবে তো জগৎ চলে না। স্থিরতা যেখানে নেই, যাদের জন্য বহুকাল ধরে' শিল্পী হাত পাকালে কাযে তারা কোথায় চলে' গেল, তার জায়গায় হঠাৎ-নবাব শাস্ত্রঘাঁটা রসিক এবং পুঁথি ধরে' ব্যবস্থা এল দেশে। তখন কবিতা গণেশবন্দনা এবং রাজ-প্রশস্তি এই দুই জাঁতিকলের মধ্যে পেষা হয়ে শুকনো ছাতু হয়ে গেল এমন যে মানুষের কাজে এল না—সরস্বতী পোকার পেট ভরাবার কাজেই লাগলো। ছবি মূর্তি এরাও রইলো নোড়ানুড়ি চুন