পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭৬
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

horse.”(—Rodin). যে ঘোড়ার যতন জানে তার হাতে দেখতে দেখতে ছেকড়া গাড়ীর ঘোড়াও সুন্দর হ’য়ে ওঠে, যে মালী গাছে যতন দেয় তার মরা গাছেও ফুল ফোটে। ঘরের যে যতন নেয় না লক্ষ্মীশ্রী তার ঘর থেকে পালায়।

 ভাল করবার, ভাল লেখবার, ভাল আঁকবার, ভাল গড়বার প্রকরণ যে যতন দিয়ে ধরে সেই যথার্থ ভাল গড়ে, আর কলের মতো সে নিখুঁত প্রক্রিয়া দখল করে' চলে। সে চলে ঠিক সেইভাবে যে ভাবে কলের পুতুল নেচে চলে। একদিকে শুকনো প্রকরণ, আর একদিকে যতনমাখা প্রকরণ, শিল্পীর technique এর এই দুটো দিক—নীরস দিক আর সরস দিক। নুড়ির আগাগোড়া নীরস—যতই তার মধ্যে প্রবেশ কর, সে নুড়ি ছাড়া কিছু নয়। আর বাদাম তার খোলার মধ্যে শাঁস লুকোনো রয়েছে। ছেলে যখন বাদাম ভাঙতে আরম্ভ করে' তখন তার মনে বাদাম ভাঙার সঙ্গে বাদাম যে হস্তগত হ’তে চলেছে তার স্বাদ আর ভাঙার আনন্দটুকু থাকে। তাই সে বাদাম ভাঙার কঠিন প্রক্রিয়াতেও রস পায়। আক চিবোতে দাঁতের ব্যথা আছেই, কিন্তু চিবোনোর সঙ্গে সঙ্গেই রস পেতে থাকে মানুষ, কাযে-কাযেই দাঁত চিবিয়ে চলে আনন্দে। একোগুড় পেটুকেই খায়, আর আর্টিষ্টকেই রস পেতে হয় কায আর চলা থেকেই। যারা আর্ট আর্ট করে’ মসগুল অথচ আর্ট সৃষ্টি করে না, তারা পেটুকের মত প্রস্তুত গুড়টাই খেয়ে চলে। আর আর্ট যারা সৃষ্টি করে তারা হয়ত অনেক সময় গুড় খেতেও পায় না। কিন্তু ঐ আকমাড়া কলটা যত্নে ঘুরিয়েই স্ফূর্তি পায় ঠিক ঘোরাবার। শাল যে বুনছে সে বুনেই আনন্দ পাচ্ছে। হাতের ছুঁচ চালানোয় যতন আর আনন্দ, দিনের পর দিন চোখ ঠিকৃরে যাওয়া সূক্ষ্ম কারুকার্য ফুটিয়ে চলায় আনন্দ। এই আনন্দ যদি না তার থাকে, যদি এ শাল সে পরতে পাবে না এই দুঃখই কেবল তার মনে জাগে, যদি শাল বোনার প্রকরণের মধ্যে কষ্টটাই বাজে তার মনে আঙ্গুলে আর চোখে, তবে সে-আর্টিষ্টের হাতের শাল ঘোড়ার গায়ের কম্বলের চেয়ে কদর্য না হয়ে যায় না।

 ফরাসী দেশের প্রসিদ্ধ শিল্পী রোদাঁকে তাঁর ছাত্র প্রশ্ন করেছিলো —“Can an artist get along without technique?” তাতে শিল্পগুরু উত্তর দিলেন, “On the contrary, it is necessary to have