পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিল্পের ক্রিয়া প্রক্রিয়ার ভাল মন্দ
১৮১

খেয়াল বলে’ সখ বলে’ জিনিসটাকে বাদ দিয়ে প্রাচীন শিল্পের শাস্ত্রকথিত রূপটার সঙ্গে মান-পরিমাণ ইত্যাদি দিয়ে যুক্ত হওয়াকেই তারা ভাবে আর্ট পুনরায় দেশের মধ্যে ধরে' আনার পন্থা। এই ভাবে অধিগত যেটা হবে সেটা শিল্প হবে না গত শিল্পের প্রাণশূন্য ভাণ হবে মাত্র, তা' তারা বোঝে না। শিল্প এবং তার নিয়ম-প্রকরণ ইত্যাদির সঙ্গে শিল্পীর সখ ও খেয়ালের কতখানি যোগ তা তারা কেমন করে' বুঝবে যারা' শিল্প করে না শিল্পশাস্ত্রই পড়ে মাত্র অভিধান ব্যাকরণ ভাষা পরিভাষা ইতিহাস ভূগোল ইত্যাদি যে ভাবে পড়ে ছাত্ররা,—তাই এরা ভাবে বুঝি ঐ রাস্তা ধরে' চল্লেই ঠিক জায়গায় পৌছে যাবে দেশের শিল্প, এবং সেটা সঙ্করত্ব পরিহার করে' একেবারে বিশুদ্ধ অবস্থায় আমাদের ঠাকুর-ঘরে এসে বসবে। সামান্য একটা কিছু যে গড়তে চেষ্টা করেছে কিম্বা জগতের শিল্পের ইতিহাসে যার একটুমাত্র দখল জন্মেছে সেই বলবে, খেয়াল ও খেয়ালী এরাই হচ্ছে শিল্পের এবং নব নব প্রকরণের জন্মদাতা,–শাস্ত্র নয় শাস্ত্রবাগীশও নয়। যার সখ রইলো তার কাছে শিল্প শিল্প-প্রকরণ সব রইলো, আর যার সখ রইলো না তার কাছে শিল্প রইল না শুধু প্রক্রিয়া শাস্ত্রের বচন ইত্যাদি রইল। কাযেই দেশের শিল্পকে পালনের ভার খেয়ালীর হাতে দিলে তত ভয় নেই যত ভয় খেয়াল যার নেই এমন প্রকরণিক ও শাস্ত্রজ্ঞের হাতে খেয়া-নৌকার হালখানা পড়লে। খেয়ালীদের হাতে পড়ে' ভারত-শিল্পের নিয়ম-প্রকরণিকদের মধ্যে ওলট-পালট ঘটে' ভারত-শিল্প ভারতীয় থাকবে না বিজাতীয় রকম কিছু একটা হয়ে উঠবে এটা সাধারণের কেউ কেউ ভাবছেন এবং সেইজন্য তাঁরা খেয়ালকে বাদ দিয়ে শাস্ত্র এবং তার শিক্ষার সঙ্গে শিল্পশিক্ষার্থীদের জুড়ে কি হয় দেখতে চাচ্ছেন। যথা, “ভারত শিল্পপদ্ধতির নামে শিল্প-সাঙ্কর্য্যের উদয় হইতেছে বলিয়া তাহার কৌলীন্য-রক্ষার জন্য চেষ্টা করা আবশ্যক... কিন্তু তাহাকে রক্ষা করিবার পথ বড়ই বন্ধুর” (অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, ভারতবর্ষ, ১০ম বর্ষ ২য় খণ্ড ৩য় সংখ্যা)।

 কৌলীন্যের পথ সত্যই বন্ধুর বটে; অল্পই প্রসার সে পথের, ছোট পথ সেটা, কৃত্রিম পথ, জল ধরে' রাখার কুণ্ড বা নালা সেটা, সেই পথে ভারত-শিল্পকে নিতে চাওয়া মানে কি তা জানিনে। খেয়ালমতো যে পথে চলবার কিছু জো নেই সে পথ কখনও কোন শিল্পের পথ হ’তে পারে না,