পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮২
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

কোন বড় জিনিস উৎকৃষ্ট পথ উদার পথ ছাড়া বন্ধুর পথে চলেনি সঙ্করতাকে ভয় করে’। সঙ্করত্বের ভয় করে’ হিন্দুশাস্ত্রমত ভারত-শিল্পের নিয়মে শিল্পীকে বদ্ধ করলে সঙ্করত্বের হাত থেকে বাঁচাতে পারি শিল্পকে কিন্তু বাঁধা প্রকরণের ভয়ঙ্করত্ব যখন শিল্পের সর্বাঙ্গে জরা আর মৃত্যুর লক্ষণগুলি ফুটিয়ে তুলবে তখন শিবেরও অসাধ্য তাকে শুধরে' রমণীয় করে' তোলা। আর্ট বিষয়ে খেয়ালীর কাছে যেতেই হবে নবযৌবন ভিক্ষা করে'। এর প্রত্যক্ষ দৃষ্টান্ত রয়েছে;—আমাদের সঙ্গীতবিদ্যা প্রকরণসার হয়ে যে দশা পেয়েছে এখন তার সঙ্গে প্রাণের যোগ করে' দেওয়া তম্বুর ঋষিরও কর্ম নয়। যদি কেউ সে কাজ করতে পারে তো সে বিদেশের খেয়ালী বা দেশেরই কোন খেয়ালী যার প্রাণে গানের সখ আছে এবং গানের ইতিহাস কছরত শেখার সখের চেয়ে গান গাইবার সখ যার বেশী। বিশ্বকর্মা একজন খেয়ালী তাই বিশ্বের জিনিস তিনি গড়ে’ উঠতে পারছেন এমন চমৎকার সুন্দর করে’—চামচিকে থেকে আরম্ভ করে জম্বুদ্বীপের এবং তারও বাইরের যা কিছু তা! বিশ্বকর্মা যদি শাস্ত্রের নিয়মপ্রকরণ মেনেই চলতেন তবে শুধু দেবমূর্তির কারিগর বলেই বলাতে পারতেন, বিশ্বকর্মা বলে' তাঁকে কোন আর্টিষ্ট পূজা দিত না। বিশ্বকর্মা হিন্দুশাস্ত্রের নির্দেশে বিশুদ্ধ গাছ বা তুলসীগাছেই যদি হাত পাকাতেন তবে কি ভয়ঙ্কর একঘেয়ে জগৎই তিনি বানিয়ে তুলতেন! এবং কবি ও রসিকদের তা হ’লে কি উপায় হ’ত— একটা গাছ দেখলেই সব গাছ দেখার আনন্দ এক নিমেষে চুকে যেত! একটা গাছ বারে বারে, একটি পাহাড় একটি নদী একই সমুদ্র বারে বারে পুনরাবৃত্তি হ’তে হ’তে চলতো আর তার মধ্যে একটি মাত্র মানুষ হয় পুরুষ নয় স্ত্রী নয় দেবতা নয় দেবী থাকতো এবং বর্ণসঙ্করতা আনার ভয়েই বিশ্বকর্মা আলো-ছায়ার মেলামেশায় সঙ্করত্ব দিয়ে দুই সন্ধ্যার রমণীয় ছবি ফোটাতে পারতেন না, হয় থাকতো চোখ-ঠিকরানো আগুনের তেজ নয় থাকতো ভীষণ অন্ধকার বিশ্বছবিটির উপর লেপা।

 শিল্পপদ্ধতির ও প্রকরণের সঙ্করত্ব বাঁচাতে গিয়ে শিল্পে যে ভয়ঙ্করত্বটি এসে পড়বে সেটা ঠেকাবার পরামর্শ শাস্ত্রকারেরা দিতে ভোলেননি। শিল্পীর হাত সব সময়ে শুদ্ধ এই কথা শাস্ত্র বলেছেন। শিল্পী দেবতাই গড়ুন আর বানরই গড়ুন বা দেবতাতে বানরে পাখীতে