পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিল্পের ক্রিয়া প্রক্রিয়ার ভাল মন্দ
১৮৩

মানুষে মিলিয়ে খিচুড়িই প্রস্তুত করুন সে যদি শিল্পী হয়, যদি তার প্রকরণের সঙ্গে তার মনের আনন্দভাবের বিশুদ্ধি এ সব জুড়ে দিয়ে থাকে সে, তবে সে বিশুদ্ধ জিনিষই রয়ে গেল। পণ্ডিতের ব্যবস্থামতো গোবর গঙ্গাজলে হাত ধুয়ে শাস্ত্রের মন্ত্র পড়ে' ধ্যান করে' গড়লেই বিশুদ্ধি আসে না, অন্তরের পূতধারা তারি স্রোত যখন শিল্পীর হাতের কায ধুয়ে দেয় তখনই সে হয় বিশুদ্ধ, ভারত-শিল্প বা আর কোন বিশুদ্ধ শিল্প। হিন্দু শিল্পশাস্ত্র মতে গড়া হলেই বিশুদ্ধ ভারত-শিল্প হবে একথা বলা চলতো যদি ভারতবর্ষ কেবল হিন্দুরই হ’ত—গ্রীক মোগল চীন নেপাল, কত কি নিয়ে যে ভারত-শিল্প হয়েছে তা কে জানে! সুতরাং ভারতবর্ষে যেমন একটি মাত্র ধর্ম নেই তেমনি ভারত-শিল্পে কৌলীন্য বলে' পদার্থ একেবারেই নেই। কেননা ভারতবর্ষ যেমন প্রকাণ্ড বিস্তার নিয়েছে সেই রকম তার আর্টও বিস্তার পেয়েছে শাস্ত্রগত পদ্ধতি ছেড়েই। কোন দেশের কোন শাস্ত্রের কৌলীন্যও তার নেই, সে সহজ নদীর মত সেকাল একাল সব কাল সব দেশ সব মানুষ সব মন সব সমাজের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে, গঙ্গাধারাকে যারা ছোট করে' দেখে তারাই কাশীর গঙ্গাকে কৌলীন্যে মণ্ডিত করে তুলতে চায় পুরাণের প্রমাণ-বলে, তারাই চায় শিল্প বাঁধা প্রকরণের মধ্যে থেকে পুষ্করতীর্থের কুণ্ডের তালের মত বিশুদ্ধ এবং সবুজ হয়ে বর্তমান থাকে চিরকাল। সে সবুজ যে কচি পাতার সজীব সবুজ নয় দূষিত তালের বিষাক্ত সবুজ সেটা ভুলে' যায় তারা।

 শাস্ত্রমতো আমাদের শিল্প কেমন হবে,—হিন্দু ভারত-শিল্প বা মোগল রাজপুত মারাঠা বাঙ্গালী ইঙ্গবঙ্গ হবে কিম্বা আর কিছু হবে, তা আমি জ্যোতির্বেত্তা নই যে ঠিক করে’ বলে’ দেবো; কিম্বা কোন্‌ রূপটা হ’লে ভাল হয় তাও আমার আজকের বলবার কথা নয়, বিষয় হচ্ছে প্রকরণের ব্যাপার নিয়ে। যার আর্টের খেয়াল নেই সে নিজের আর্ট বা অন্যের আর্টে প্রকরণ দখল করাতে যে শ্রম আছে তা নিতেই চায় না। প্রথম চাই খেয়াল বা সখ, তারপর লোক খুঁজে বা শাস্ত্র ঘেঁটে নানা প্রকরণের দখল এবং সবশেষে নিজের মনোমত করে প্রস্তুত করা সামগ্রী সমস্ত। এখানেও পুঁথি পড়ে' চলার চেয়ে হাতে হাতে কারিগরের কাছে এবং নিজে নিজে কাজ করতে করতে প্রকরণে যে জ্ঞান জন্মায়