পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৪
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

সেটা মূল্যবান। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র দেশী রঙএর যে বইখানা লিখেছেন সেই রকম আরো অনেকগুলো বই হ’লে ক্রমে সেগুলি হয়ত বর্ণশাস্ত্র হয়ে উঠবে। এবং সেই সব রঙ প্রস্তুতের প্রকরণ পাচ্ছেন তিনি কতক পুঁথি থেকে কতক বণিকদের কাছ থেকে। এখন আমাদের কাযে সেটা লাগছে, পরেও কাযে লাগবে, কিন্তু এই বই শাস্ত্র হয়ে ওঠবার পর আজ থেকে এক শত বৎসর পরের শিল্পী হয়ত দেখবে নতুন বর্ণ-বিধান, কিম্বা সে হয়ত নিজেই একটা নতুন বর্ণ আবিষ্কার করবে; সে সময় তাকে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের লিখিত বর্ণশাস্ত্রের মধ্যেই থাকতে হবে, না হলে তার জাতিপাত, একথা কি কেউ বলবে, না বর্ণশাস্ত্রে বর্ণসঙ্করত্ব ঢোকাচ্ছে বলে’ তাকে দোষ দেবে? শাস্ত্রকে এভাবে প্রকরণ অর্জনের ব্যাঘাতজনক করে' তুলে' কি ফল তা আর্টিষ্ট আবিষ্কর্তা এবং যাঁরা আচার্য এবং শাস্ত্রকার তাঁরা বুঝবেন, শুধু বুঝবেন না তাঁরা যাঁরা শিল্পের একটা অদ্ভুত কৌলীন্য প্রকাশ করছে;—কাচের বোতলে ভরা ডিস্‌টিল্‌ড্‌ ওয়াটারের চেয়ে স্বচ্ছ সেই কৌলীন্য হলেও সেটা কতটা বড় জিনিষ তা বলতে পারিনে, কিন্তু সেটা বোতলের মধ্যে যাদুঘরের মরা টিকটিকির মতো বিশ্বের হাওয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকবে চিরকাল আপনার এতটুকু কৌলীন্যে ডুবে এটা যেন দেখতে পাচ্ছি।

 প্রকরণ চারদিক থেকে অর্জন করতে হয় আর্টিষ্টের তখন বাছবিচার নেই, শুধু সেই প্রকরণ প্রয়োগের সময় কোন্‌টা কিসে খাটবে তার বিচার। ভূ-দৃশ্য আঁকার প্রকরণ দেশীয় এবং শাস্ত্রীয় যে শিল্প তাতে নেই, এ প্রকরণ বিলেত থেকে আনতেই হবে। মানুষের চেহারা—সেখানেও অর্জন করা চাই আঁকার এই প্রকরণ। খালি দেবতা এঁকে ভারত-শিল্পের আভিজাত্য বজায় রেখে চল্লে মানুষ গরু গাছপালা এমন কি পৃথিবীটাই বাদ পড়ে যায়। ভারত-শিল্পের বিশেষত্বই এই এবং ভারতবর্ষেরও বিশেষত্ব সেই। কি সমাজ কি শিল্প কি উচ্চতর জ্ঞানবিজ্ঞান সবার প্রথা প্রকরণ অর্জনের বেলায় সে অকুলীন—একটুও ভয় পায়নি ভারত-শিল্প গ্রীসের স্পর্শে আসতে, অসভ্য পার্বত্যজাতির শিল্পের এমন কি অনার্য আদিম শিল্পেরও স্পর্শে আসতে। সব দিক দিয়ে সে অর্জন করেছে শিল্পপ্রকরণ সামাজিক ব্যবস্থা জীবন যাত্রার পদ্ধতি। হিন্দু ভারতবর্ষের চেয়ে যে বড় ভারতবর্ষ, হিন্দু ভারত-শিল্পের যে বড়