পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সুন্দর నది ( এই যে ব্যক্তিগত মতামত, সুন্দর অসুন্দরকে নিয়ে এই যে সব ছোটখাটো তর্ক-বিতর্ক, যার কোনো শেষ দেখা যায় না, নানা সুন্দরের সৃষ্টি করে করে মানুষ দেখতে চেয়েছে এটিকে নিরস্ত করতে পারে কি না ।প রচনাকে স্থান কাল পাত্রের অতীত করে দিতে চেয়েছে মানুষ ; শোনাবার জন্যে যে সব রচনা তা মানুষ উপযুক্ত ছন্দোবন্ধ মুর-সার ইত্যাদি দিয়ে, দেখাবার জন্তে যে রচনা তা যথোপযোগী রংচং ও নান কায়দা দিয়ে সব সময়ে সবার উপভোগ্য ও সুন্দর করার চেষ্টা করে গেল কালে কালে। স্বরকে, সঙ্গীতশাস্ত্রের মধ্যে, কথাকে ছন্দশাস্ত্রে, ছবিকে বর্ণশাস্ত্রের মধ্যে ধরে মানুষ দেখতে চল্লো কি হয়, কিন্তু বাস্তবিক যা সুন্দর তা ধরা গেল না একটা কিছুর মধ্যে, সে বিচিত্রতা ও বিস্তার চেয়ে বাধন কাটতে থাকলে বারে বারে । কোন ছবি বর্ণ ছেড়ে খালি রেখার ছন্দ ধরে’ হয়ে উঠলো ভারি সুন্দর, কোন গান শাস্ত্র মতে তাল মান সুর ছেড়ে প্রায় সহজ কথা হয়ে পড়ে’ হ’ল সুন্দর, আবার কোথাও ছবি হয়ে হ’তে চল্লো সুন্দর, তিন শাস্ত্রের পাতা উল্টে পাল্টে এক হয়ে গেল, ছন্দ পেয়ে ছবি অথবা ছবি পেয়ে ছন্দ সুন্দর হয়ে ওঠে, বোঝা কঠিন হ’ল বোঝানও কঠিন হ’ল ! রচনাতে স্থান কাল পাত্রের সীম৷ অতিক্রম করার জন্ত নতুন নতুন উপায়ের সৃষ্টি হয়েই চল্লো । আকাশের চাদকে আমরা প্রায় সকলেই সুন্দর দেখি, কিন্তু কি নিয়ে চাদ সুন্দর যদি এ প্রশ্ন করা যায় তবেই গোলযোগ বাধে। কেউ বলে চাদনী নিয়ে চাদ সুন্দর, কেউ বলে তার ছাদটী নিয়েই চাদ সুন্দর, কেন না অনেক শিল্পী দেখেছি কালে চাদ একেছেন অথচ ছবিটির সৌন্দর্যহানি একটুও ঘটেনি। আর্টিষ্ট মানুষের অনেক রকম পাগলামি থাকে, সুতরাং কালে চাদের উদাহরণটি সবাই স্বীকার করতে নাও রাজি হতে পারেন। কিন্তু ঠিক এই উপায় দেখেছি প্রকৃতিদেবীও অবলম্বন করেছেন নিজের রচনাতে— সাদা তুষারকে কালে নীলবর্ণ করে দেখিয়েছিলেন তিনি আমাকে যতদিন পাহাড়ে বাস করেছিলেম ততদিন—প্রত্যেক প্রভাতে সোনার আকাশপটের মাঝখানে কালো তুষারের ঢেউ, অথচ দৃশ্যপটে একটুও সৌন্দর্যহানি হ’ল না। ’ চাদনী রাতের বেলায় আমরা বলে থাকি, দিবিব ফুটফুটে রাত, অন্ধকার রাতের বেলায় দিবিব ঘুটঘুটে অন্ধকার তো বলিনে !