পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২০৬
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

কিন্তু কবিরা দুটোই যে সুন্দর তার এত প্রমাণ হাতের কাছে রেখে গেছেন যে তা উঠিয়ে লেখা বড় করা মিছে। এই সে দিন একখানা চীনদেশের পাখা আর একখানি জাপানের পাখা হাতে নিয়ে দেখছিলেম, —জাপানের পাখাখানি সাদ, তার উপরে নানা রঙের ছবির বাহার, দিনের আলোয় স্বন্দর পৃথিবীর একটুখানি যেন দেখা যাচ্ছে, চীনের পাখাখানি ঠিক এর উল্টে ধরণে আঁকা ; অন্ধকার রাত্রির একটি মাত্র প্রলেপ, তার মধ্যে কোন ছবি কি কোন রঙ নেই—স্নিগ্ধ গভীর ঘুমপাড়ানো কালে অথচ ভারি সুন্দর। এই যে মুন্দরকে দেখতে দুই দেশের দুই শিল্পী পাখা মেল্পে, একজন দিনের দুয়ার দিয়ে আলোর মাঝে উড়ে পড়ল প্রজাপতির মতে, অন্যজন একেবারে অন্ধকার সাগরে খেয় দিয়ে চল্লো—এরা দু’জনেই তো দেখে গেল দেখিয়ে গেল সুন্দরকে ? প্ৰযারা ভারি পণ্ডিত তারা সুন্দরকে প্রদীপ ধরে দেখতে চলে আর যারা কবি ও রূপদক্ষ তারা সুন্দরের নিজেরই প্রভায় সুন্দরকে দেখে’ নেয়, অন্ধকারের মধ্যেও অভিসার করে তাদের মন । আলোর বেলাতেই কেবল সুন্দর আসেন দেখা দিতে, কালোর দিক থেকে তিনি দূরে থাকেন-একথা একেবারেই বলা চল্পনা বিষম অন্ধকার না বলে’ বলতে হ’ল বিশদ অন্ধকার—যদিও ভাষাতত্ত্ববিদ এরূপ করায় দোষ দেখবেন । কালো দিয়ে যে আলো এবং রঙ সবই ব্যক্ত করা যায় সুন্দরভাবে তা রূপদক্ষ মাত্রেই জানেন । এই যে সুন্দর ক্লালো এর সাধনা বড় কঠিন। সেই জন্য জাপানে ও চীনদেশে একটা বয়স না পার হ’লে কালি দিয়ে ছবি আঁকতে চেষ্টা করতে হুকুম পায় না গুরুর কাছ থেকে শিল্পশিক্ষার্থীরা । যে রচনায় রস রইলো সেই রচনাই সুন্দর হ’ল এটা স্থির, কিন্তু রস পাবার মতো মনটি সকল মানুষেই সমানভাবে বিদ্যমান নেই, কাজেই এটা ভাল ওটা ভাল নয় এই রকম কথা ওঠে। মেঘের সঙ্গে ময়ূরের মিত্রত, তাই কোন একদিন নিজের গলা থেকে গন্ধৰ্ব নগরের বিচিত্র রঙের তারাঁ-ফুলে গাথা রঙ্গীন মালা ময়ূরের গলায় পরিয়ে দিয়ে মেঘ তাকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিলে। মানুষ প্রথম ভাবলে, এমন সুন্দর সাজ কারে নেই। তারপর হঠাৎ একদিন সে দেখলে বকের পাতি পদ্মফুলের মালার ছলে সুন্দর হয়ে