পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২১০
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

পাতলা পদার ওপারে তবেই সুন্দর ঠেকলো মানুষটা। আর্গিণ যন্থের ঘেরাটোপ খুলে দিয়ে তার ভিতরের কারখানা যদি চোখের সামনে ধরে দেওয়া যায় তবে সেটা খুব সুদৃশ্ব বলে ঠেকে না । আমি একবার একটা ছাপার কল অনেকক্ষণ ধরে দাড়িয়ে দেখেছিলেম। যন্ত্রটা একসঙ্গে অনেকগুলো মানুষের কায একা করছে, মানুষের চেয়ে সুচারু ও দ্রুতভাবে। এতে করে ভারি একটা আনন্দ হ’ল, কিন্তু একটি পার্থীকে উড়তে দেখে যে আনন্দ তার সঙ্গে সেদিনের আননে তফাৎ ছিল। পার্থীর ডানার মধ্যে নানা কল-বল কি ভাবে কায করছে তার খোজই নেই, ওড়ার সুন্দর ছন্দই সেখানে দেখা দিয়ে মনকে উড়িয়ে নিয়ে গেল কোন দেশে তার ঠিক নেই। স্বষ্টির নিয়মে সমস্ত সুন্দর জিনিষ আপনার নির্মাণের কৌশল লুকিয়ে চল্লো দর্শকের কাছ থেকে এবং এই নিয়মই মেনে চল্লো সমস্ত সুন্দর জিনিষ যা মানুষে রচনা করলে—যেখানে নিমর্পণের নানা প্রকরণ ও কৌশল ধরা পড়ে গেল সেখানেই রচনার সৌন্দর্যহানি হ’ল, কলের দিক ফুটলো কিন্তু রসের দিক সৌন্দর্ষের দিক চাপা পড়ে গেল।> ঘুড়ি যখন আকাশে ওড়ে তখন যে কলটি তাতে বেঁধে দেয় কারিগর সেটি বাতাসের সঙ্গে মিলিয়ে যায় তবেই সুন্দর ঠেকে ঘুড়িখানির ওড়ার ছন্দ। জাহাজ এমন কি উড়ো কল তারাও দেখায় সুন্দর এই কারণে এবং সবচেয়ে দেখায় সুন্দর গঙ্গার উপরে নৌকাগুলি যার চলার হিসেব ও কল-বল প্রত্যক্ষ হয়েও চক্ষুশূল হচ্ছে না । • সুন্দর জিনিষের বাইরের উপকরণে আর ভিতরের পদার্থে হরিহর আত্ম—যেমন রূপ তেমনি ভাব। বহিরঙ্গ যা তার সঙ্গে অস্তরঙ্গের অবিচ্ছেদ্য মিলন ঘটিয়ে সুন্দর বতমান হ’ল - চোখের বাইরে যে পরকলা তার সঙ্গে চোখের ভিতরে যে মণিদপণ তার যোগাযোগ অচ্ছেদ্য হ’ল, তখনই সুন্দরভাবে দেখতে পাওয়া গেল বিশ্বের জিনিষ, চশমার র্কাচে আঁচড় পড়লো চোখ রইলো পরিষ্কার, কিংবা চোখের মণিতে ছানি পড়লো চশমা রইলো ঠিক ঠাক, এ হ’লে সুন্দর দেখা একেবারেই সম্ভব হ’ল না । মৌখিক আত্মীয়ত ভারি বিঞ্জ ঠেকে, কেন না, কথা সেখানে শুধু মুখ থেকে বার হচ্ছে, বুক থেকে নয় ; কোলাকুলি সেও বাইরে বাইরে