পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২২৪
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

এবং নিজের নিজের রুচি অনুসারে যে সব রাগ-রাগিণী রচনা হয়ে গেল, তার থেকে সময়ে সময়ে নানা বঁধুনী ও কায়দার হিসেব জড়ো করে আইন প্রস্তুত হ’ল—সঙ্গীতশাস্ত্ৰ হ’ল, ছন্দশাস্ত্ৰ হ’ল, নাট্যশাস্ত্ৰ হ’ল। নতুন যখন মানব-সমাজ, তখন এই বেড়া খুব কাজে এল তার শিল্পকলাকে বঁচিয়ে রাখতে, কিন্তু গাছ বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আল ও বেড়া তুষ্ট বাড়িয়ে চলতে হ’ল, না হ’লে জাত বঁাচে কিন্তু গাছ বাড়ে না। এই বেড় বাড়ানো বা জাত না বঁচিয়ে গাছের জীবন বঁাচানোর কাজ রসিকেরা সময়ে সময়ে এসে এদেশে ওদেশে করে গেলেন, এ গাছের সঙ্গে ও গাছের এ জাতের সঙ্গে ও জাতের মিলন সেও ঘটালেন রসিকেরা-জাত শিল্পফল ধরিয়ে ফুল ফলিয়ে ফসল বৃষ্টি করে চল্লো এবং জাতি রাজার ভাড়ারে সে সব জমা হ’তে থাকলো, জাতি খাজনা নিলে জাতীয় শিল্পের, দিলে খাজনা দু’চার রসিকের মারফত দু’চার কবি দু’চার শিল্পী দু’চার গাইয়ে দু’চার বাজিয়ে নাঁচিয়ে তারা। জাতির সঙ্গে জাতীয় শিল্পকলা সমস্তর সম্বন্ধ কালিদাসের রাজার প্রজার “স পিতঃ” গোছের নয়, “পরের ধনে পোদারী” করার সঙ্গে তার মিল আছে। সমঝদারে কারিগরে রসিকে গুণীতে দরদ দিয়ে করে গেল গান বল, ছবি বল, কবিতা বল সব নিয়ে উৎসব। তাদের ক'জনের উৎসবের শেষে পড়ে রইলো যা ফুলশয্যা কিম্বা ময়ূরসিংহাসন তারি উপরে জাতের কত এসে মিল বসিয়ে দিয়ে গেল—হঠাৎ-নবাব জাত নিলেমে সেগুলো কিনে নিয়ে সস্তায় নবাবি আমলের একটা অভিনয় করতে থাকলো, সভাকবির দল শিল্পীর দল সৃষ্টি হ’য়ে কবির লড়াই গানের লড়াই ইত্যাদি মুরু হ’ল ; স্বভাব-কবি কন্ধে পেলে না সে সভায়, কেননা সে আসল বস্তু দিতে চায়, কোন এক বড় আসলের নকল দিতে পারে না একেবারেই। নবাবি আমলের পরে এল যখন সাধারণের আমল তখনি জাতীয় শিল্পের খোজ পড়ে গেল দেখি ; সাধারণ অসাধারণ রকমে রসিক হয়ে উঠলো তখন । এই ভাবের জাতীয় যুগ ইতিহাসের পাতায় চিহ্ন রেখেছে যেমন, তেমনি কবিতায় গানে শিল্পকলায়ও ছাপ রেখেছে। এই সাধারণ সভা বা জাতীয় সভায় কবির লড়াই দিতে দিতে প্রাণান্ত হয়েছে কত কবির তার ঠিক আছে কি ? শিল্পের সঙ্গে জাতির বিবাহ রাক্ষস-বিবাহ, জাতার সঙ্গে মণিমুক্তার বিবাহ দিলে যা ফল হয় সেই রকমের বস্তু হচ্ছে