পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৩২
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

থাকে, কালে সেগুলো ফুটতে থাকে ভাল-মন্দ আবহাওয়ার বশে । কোন ছেলের কথা ফোটে আগে, কোন ছেলে কথা বলে দেরীতে, কিন্তু যে ছেলে বোবা তার কথা বড় হ’য়েও ফোটে না, বুড়ো হ’য়েও ফোটে না—যতই কেন ভাল আবহাওয়ায় সে থাকুক না। বয়সে দাত পড়লে চুল পাকলে, দাতও বাধালেম চুলও কালে করলেম ; দুটোই সেখীন জিনিষের মতে, শিকড় গাড়লে না জীবন্ত মানুষের রক্ত চলানোর ক্ষেত্রে। এই ভাবে জাতীয় শিল্প সঙ্গীত কবিতার রঙ ধরানো যায় একটা বুড়ো জাতির গায়ে কিন্তু সেই কৃত্রিম রঙ তো টেকে না বেশীদিন এবং সেটা দিয়ে জাতির জরা এধং মরার রাস্তাও বন্ধ করা চলে না একদিনও । ষেখানে জাতীয় জীবন বলে একটা কিছু নেই সেখানকার মানুষগুলির সঙ্গে কতকগুলো শিক্ষাগার পাঠাগার কমশালা ধম শালা আখড়া আড্ডা আশ্রম ভবন ইত্যাদি যেন তেন প্রকারেণ জুড়ে দিলেই ষে ঠিক ফলটি পাওয়া যাবে এমন কোন কথা নেই। মরা আমগাছে নাইট্রোজেন বৃষ্টি করে আঁকসী হাতে বসে’ ফল পায় কি কেউ ? জাত দু’তিন রকমের আছে ; যেমন, ক্ষুপ জাত অর্থাৎ জাতে বড় গাছ কিন্তু এক বিঘতের বেশী তার বাড় নেই, ডালপালাগুলো চীনের পায়ের মতো বিষম বাকাচোরা, দেখতে গাছের মতো ঝাকড়া কিন্তু ফল দেয় না, ফুল দেয় না, ছায়া দেয় না, টবে ধরা থাকে । আর এক রকমের জাত ক্ষোপ, জাত, মৃত জাত, শুকনো গাছ, অনেক কালের মর কাঠ, দেশ বিদেশে পাখী কাঠবেরাল বনবেরাল কাগাবগার খোপ আর দাড়ের কায করছে। ক্ষুপ জাতের সুবিধে আছে যে কোন গতিকে টব থেকে ছাড়া পেলে সে তেজে বেড়ে উঠতে পারে, ক্ষোপ জাতের সে সুবিধে নেই, ক্ষেপে খাপে ফোপর কাঠ তাতে টেবিল চৌকিও তৈরি হয় না, জালাতে গেলে ধুয়া হয়, শুধু সেটা নিয়ে দেহতত্ত্বের এবং জাতিতত্ত্বের নানা গভীর কথা সমস্ত আলোচনা করা চলে। একদিকে বাড়হারানো বড় জাত, অন্য এক দিকে বাড়-দাবানে বড় জাত, ভারতবষী জাত বলতে এ দুটোর কোনটা বলা শক্ত। আমি দেখি আমাদের আজকের জাতীয় জীবনটা এই দুয়ের খিচুড়ী। ছিল জাত হবিন্যান্নজীবী, হ’ল ক্রমে খেচরান্নজীবী। আগের জাত ভাল ছিল এখন হ’ল মন্দ এ কথা