পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৪৪
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

সমুদ্রের জলের পরিমাণ করে নেবার দাড়ি পাল্লাখানি —তবে হয় লোকে বলবে আমার চোখ খারাপ কিংবা উল্টো চশমা পরেছি। এর চেনে বেশীও বলবে। হিমালয়কে একটা মাটির ঢেল ওজন করবার দাড়িপাল্লার মত দেখায় মজা আছে, রসও এক রকমের আছে, কিন্তু তাই বলে সেট হিমালয়ের উপযুক্ত বর্ণনা একেবারেই নয়। বলতে সাহস হয় না, তাই বলি যে মহাকবি কালিদাসের ভুল বর্ণন চাদের কলঙ্ক, আর চশম চোরা অকবির ভুল বর্ণন তার নিজের মুখের চুণকালির প্রায় । এ কথাট সহজ সত্য কথা, কিন্তু এ কথা মতো চলা অত্যন্ত কঠিন সেই জন্তে জগন্থে অনেক কবি নেই, অনেক আর্টিষ্ট নেই, অনেক রসিকও নেই, ঋষি৫ নেই—র্যাদের আর্ষ প্রয়োগ মাপ করা চলে । তিন মাস আমি নিজের লাঠি ধরে পাহাড় প্রদক্ষিণ করেছি, কোনদিন পর্বতের কাছে বখসিস পেয়েছি, কোনোদিন পাইনি। মহাকবির চাদরের খুটি ধরে গেলে হয়তো পদে পদে কিছু না কিছু প্রসাদ পেতেম। কিন্তু আমার প্রশ্ন এই যে, কবির বর্ণনার সঙ্গে মিলিয়ে পর্বতকে পাওয়া অকবির বর্ণনার সঙ্গে মিলিয়ে পাওয়ার চেয়ে ভাল হ’লেও নিজে খুঁজে পাওয়ার আনন্দের একবিন্দুর সঙ্গে তার পরিমাপ হয় কি ? মহাজনের সঙ্গে চল নিরাপদ এটা সবাই বলে, কিন্তু মহাজন নিজের চোখের চশমা অন্তের চোখে পরিয়ে যে সহজ দেখার পথ বন্ধ করেন এ তে মিছে কথা নয়। রূপ নিজের দৃষ্টির বিষয়, সে মধুর কি মধুর নয় তা নিজে দেখে বুঝি । ‘রূপের পদ পরিয়ে অরূপকে দেখ”—এটা মহাজনদের কথা, কিন্তু রূপ রূপ দেখাতেই তো আছে এটা সহজ মানুষের কথা । পূর্ণচন্দ্রের আলোকে পরাস্ত করে পর্বতের উপরের তারাটি জলছে, তার রূপ দেখেই আনন্দ, তারাটা কোন তারা, তারার অন্তরে কোন দেবতার দীপ্তি-—এ সব মনে নাই বা এলো । যার রূপ আছে সে রূপ দিয়েই মন টলায়, নকিবের দরকার তার যার নিজের রূপগুণাদির পরিমাণ যথেষ্ট নয়। ইন্দুমতীর স্বয়ংবর সভায় রূপ নকিবের দেওয়া সাজ না পেয়েই বরমাল্য লাভ করলে । রূপের দর্শন করে আনন্দিত হওয়াতেই তার পরিণতি, রূপ থেকে স্বতন্ত্র রঙ থেকে স্বতন্ত্র বর্ণহীন রূপহীন অরূপের প্রতীক হওয়াতে রূপের সার্থকতা নয়। প্রতিমার মর্য্যদা প্রতীক হ’য়ে পড়াতে নয়, রূপের আসনই তার গৌরবের আসন । গৌরীশঙ্কর হিসেবে