পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৪৬
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

হারমোনিয়ামের শব্দ অত্যস্ত বদ কিন্তু কেমন করে আমাদের কানে স’য়ে গেছে বুঝতেই পারিনে যে দেবী বীণাপাণির কার্ন লজ্জায় রাঙা হ’য়ে ওঠে সেটা দেখা মাত্র। আমি সেদিন একটা ছদ্মবেশের সভায় চীনের জুতো আর কোত পরে’ গেলেম, বন্ধুরা অামায় দেখে চাপ হাসি হাসলেন, কিন্তু আমার পাশেই আধখানা ধুতি আধখান কোট পরে কত লোক এল গেল, কারু চোখে তার কদর্যতা ধরা দিলে না ; স'য়ে গেছে বলেই তো ! রূপ সম্বন্ধে বলবার সময় অরূপের কথা ওঠে প্রায়ই দেখি এবং অরূপের আধার রূপ এও বলা হয় এবং অরূপের সাধনার জন্তই আর্টে রূপের অবতারণা এমনো বলা প্রচলিত হ’য়ে গেছে চিত্র-সমালোচনাতে, সুতরাং গত তিন মাস ধরে পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে’ ছবিতে এই রূপঅরূপের ঠিক যোগাযোগটা কি ভাবের তা ধরার চেষ্টায় রইলেম । দেখতেম পর্বতের সামনে যখন কুয়াস তখন অরণ্য নেই, পাহাড়ের ঝরণা নেই, চোখের কায ফুরিয়ে গেছে তখন, মনের এবং কানের কায আরম্ভ হ’য়ে গেছে । জলের শব্দ শুনছি, পাখীর গান শুনছি অার ভাবছি কত কি, কিন্তু এটা যে পাখী গাইছে ওটা যে ঝরণা করছে তা মনে ধরা রূপ সমস্ত কুয়াশা হবার আগে থেকেই জানিয়েছে আমাকে। আবার পর্বতের উপরে অমাবস্যার রাত্রি যে কি ভয়ানক অন্ধকার তা পাহাড়বাসী মাত্রই জানেন, পায়ের তলা থেকে মনের কাছ থেকে পথ সম্পূর্ণ হারিয়ে যায়, অরূপ ঘিরে নেয় চারিদিক, দূরত্ব নৈকট্য আর থাকে না, বিষম ভ্রান্তির মধ্যে স্তব্ধ হ’য়ে খুজে বেড়ায় চোখ আর মন দুজনেই হারানো রূপ আর তার স্মৃতি । যার কোন পরিচয় আমার কাছে ধরা পড়লে না সেই রইলো আমার কাছে অরূপ হয়ে বর্তমান । বড় সভায় বক্তার সামনে দুই একজন পরিচিত এবং নিকটবর্তী অপরিচিত মানুষ ছাড়া বেশীর ভাগ শ্রোতাই নিজের নিজের রূপ না দেখিয়ে লোকে পরিপূর্ণ ঘর এইটুকু মাত্র জানাতে থাকে —এ একভাষে রূপ-অরূপের যোগাযোগ, এর ধারণা ছবিতে পৌঁছে দেওয়া চল্লো। অবগুষ্ঠিত। মুন্দরী সবাই অঁাকে, পর্দানশীন সবাই অঁাকে, সেখানে মানুষটি ছেড়ে দেওয়া গেল দর্শকের কল্পনার উপরে, শুধু অবগুণ্ঠন একেই খালাস চিত্রকর। যন্ত্রসঙ্গীত আরো এগোলে, গোট দুই