পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অরূপ না রূপ ২৪৯ মটাতে গিয়ে ভারত-শিল্পকে আধ্যাত্মিক বলে সুখানুভব করার চেষ্টাও করছেন দেখি কেউ কেউ । ভারত-শিল্প সত্যিই যদি ছেড়া পকেট হয় তো তাকে উল্টে ছেড়া বালিসের খোল বলে প্রমাণ করে মক্ত করা যেতে পারে কিন্তু ছোড়া বটে এটা তো ঢাকা পড়ে না ! হীরকের প্রভ জল জ্বল করছে, চন্দ্রকান্ত মণির প্রভা কুয়াসার মধ্যে টল টল করছে—বাজারে দিলে একটাকে বহুমূল্য অন্যটাকে স্বল্পমূল্য বলে। অরূপের যে পক্ষপাতী সে চন্দ্রকান্ত মণিকে প্রাধান্ত দিয়ে বলবে, এ যে অরূপের ধ্যান ধরে আছে—অতি ভাল জিনিষ, রূপের যে পক্ষপাতী সে হীরেকে হাতে তুলে বলবে, এর রূপের রঙের সীমা নেই, এর তুল্য ওটা নয়। অপক্ষপাতী শিল্পী মণি দুটোকেই এক সূত্রে গেথে বলবে এরা দুটি মাণিকজোড়—হীরকের সুপরিস্ফুট জ্যোতির মধ্যে তীরের মতো পলতোলা বা বাহ্য রূপ তলিয়ে আছে, চন্দ্ৰকান্ত মণির নিটোল সুবিম্বিত রূপের মধ্যে তার জ্যোতি তলিয়ে আছে । অনুপমের মধ্যে রূপ, রূপের মধ্যে অনুপম, অনির্দিষ্ট জ্যোতির অবগুণ্ঠনে সুনির্দিষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট রূপের গর্ভে অনির্দিষ্ট জ্যোতি রসিকের কাছে ; দুয়ের উচ্চ-নীচ ভেদ কোথায় ? ভিন্ন দেখে তারাই যারা রূপের র"ও দেখে না, কেবল ‘রূপ-অরূপ রূপ-অরূপ করে মালা জপে । - ঘরের দেওয়ালে ঘেরা জীবনে যে মাধুর্য আকাশের তারাখচিত নীল ঘেরাটোপে ঢাকা জীবনের মাধুর্যের চেয়ে তা কম জিনিষ এটা বলা চলে না । এটা এতখানি ওট। ততখানি এও বলা নিরাপদ নয়, অনেক সময়ে ঠকতে হয়,—জীবনের স্বাদ বিচিত্ৰত হারায় । তেমনি রূপের এক প্রস্থ অরূপের আর এক প্রস্থ ভাগ করে নিয়ে যারা দুটো দেখে, তার রসের এক নদীর চমৎকারি রূপ দেখতে পায় না, নদীর থেকে সরিয়ে আন দুটো খালের কিনারায় কিনারায় বসতি বেঁধে বসে যায়। মাটির প্রদীপখানি মাটির ঘরের কোণে ; আকাশের তারা চেয়ে প্রদীপের দিকে, প্রদীপ চেয়ে তারার দিকে—এই দুই চাওয়ার সূত্রটি কেটে দেখতে চায় যে সে পায় ছেড়া মালার এ-আধখানা নয় তো ওআধখানা। রসের ও রূপের পূর্ণ পাত্র পড়ে না তার হাতে । পর্বতে বসে দেখতেম এক পাহাড় কুয়াসাতে ঝাপসা, আর এক পাহাড় আকাশপটে সুস্পষ্ট টানা—কিন্তু দুয়েরই থেকে এক ঝরণা O. P. 14–32