পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৭৪
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

পথ খোলা রয়েছে শুধু এইটুকু তফাৎ হয়েছে—আগেকার তার শিখতে রূপরেখাকে চোখের সামনে দেখে, আর আজ ছাত্র এব: মাষ্টার দুই দলেই বক্তৃতায় শুনে বুঝতে চলি রূপ-রেখার আমূল তত্ত্ব । দুগ্ধফেননিভ বিছানার কথা শুনে শুনে বস্তুটির সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ আর বিছানাটায় একবার গড়িয়ে নিয়ে বস্তুটি কি জেনে নেওয়া—ছই রকমের জ্ঞানলাভের মধ্যে প্রভেদ আছে তো ! একজন যে রূপ-রেখা টানলে বা রচলে সে এবং যে বই পড়লে রূপ-রেখার হিসেবের কিন্তু টেনে দেখলে নী ব্যাপারটা কি—দুজনের মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যবধান রইলো ; যে শুধু গান গাইতে পারে এবং যে গান রচতে পারে দ্বজনের মধ্যে যেমন স্বর-জ্ঞান বিষয়ে বিষম অমিল, তেমনি অমিল কারিগরে আর রূপদক্ষে, তেমনি অমিল রূপ-রেখাকে যে জানে আর রূপ-রেখাকে যে জানে না কিন্তু রেখা দিয়ে রূপকে বাধতে জানে তাদের কাযের মধ্যে। একটি ছোট মেয়ে যে পল্লীগ্রামের দাওয়ায় বসে আলপনা টানছে, কঁাথা বুনছে, সে পেয়ে গেছে রূপ-রেখাকে কিন্তু একজন মস্ত ইঞ্জিনিয়ার যে রুল কম্পাস দিয়ে রেখা টানছে কিংবা কারখানা ঘরের শিল্পী যে বাধা চালে কাপেটের ফুল তুলে চলেছে এ দুজনের মধ্যে কেউ পায়নি রূপ-রেখার সন্ধান—এ তো মিছে কথা নয়। তেমনি দেখি একজন বাউল পথে পথে ঘুরছে কিন্তু গলার স্বরে স্বরে রূপ-রেখার টান এসে গেছে তার কাছে, কিন্তু একজন তথাকথিত কালোয়াত যে হারমোনিয়ম ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে গল! মিলিয়ে গাইছে সভাস্থলে চাল দোরস্ত হিন্দী গান হিন্দুস্থানী মুর দিয়ে ঘাড় মোচড়ানে বাঙলা কথা—তার ডাকাডাকির ত্রিসীমায় রূপ-রেখা আসছে না স্বরের সূত্র ধরে । এ-গাছে ও-গাছে এ-ফুলে ও-ফুলে এ-পাখীতে ও-পাখীতে তোমাতে আমাতে শুধু রূপের বিভিন্নত নয়, চল। বলা ভাবনা চিন্তা কায কমও আমাদের এক এক রূপ। এই যে রূপে রূপে ভিন্নতা এটা সবারই চোখে পড়ছে কিন্তু এই ভিন্নতাটুকু ছবিতে কি কবিতায় কি কথায় ধরে দেখানোর কৌশল সবার কাছে নেই। মামুষে পাখীতে যে একরূপ নয় তা ছোট ছেলেও জানে ; তাকে মানুষ অঁাকতে বল্পে সে এক প্রস্থ রেখা ব্যবহার করে যেগুলি পাখীর বেলায় সে মোটেই ব্যবহার করে না। যেমন লিখে আমরা জানাচ্ছি মানুষ এই তিনটি অক্ষর দিয়ে, তেমনি ছেলেও বোঝাচ্চে এক