পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
রূপ দেখা
২৭৭

প্রস্থ রেখা দিয়ে মানুষ । ছেলের লেখা মানুষ যেমন কোনো বিশেষ মানুষ নয়, সে তার আপনার মামুষের প্রতীক তেমনি রূপদক্ষের লেখা রূপ সেও তার আপনার কল্পিত রূপ, দেখ রূপের ছাপ নয় । কিন্তু এক জায়গায় রূপদক্ষের সঙ্গে ছেলের লেখার পার্থক্য—রাপের বিভিন্নতা দিয়ে রসের বিচিত্রতা ছেলের দ্বারা হয়ে ওঠে না বড় একটা, তা ছাড়া ছেলের হাতের সঙ্গে তার হাতে টানা রেখার একটা আড়ি থাকে—ছেলে জানে না রেখাকে বাগ, মানাতে হয় কি উপায়ে। এই রেখাঙ্গানের রহস্ত-ভেদ করে তাকে দিয়ে ইচ্ছামতে রূপ বাধা এবং রূপে ও রেখায় এক করে’ দিয়ে রসের পথ খুলে দেওয়া জেনে শুনে—এ হ’ল রূপদক্ষের সাধনার বিষয় । চোখে দেখছি যে সমস্ত বাধা রূপ ধরে ধর রূপ বাইরে ধর রূপ এর যদি রঙ্গমঞ্চের দৃশ্ব-পটে আঁকা জিনিষগুলোর মতো সম্পূর্ণভাবে অনড় ও অপরিবর্তনীয় রূপে ধরা থাকতো, তবে পৃথিবীতে এদের চিত্রিত করতে চাইতে না বা কবিতায় গানে গল্পে এদের কথা বলতেও চাইতে না মানুষ। খাড়া দাড়িয়ে রইলো রেখা, মড়ার মতে পড়ে রইলো রেখা-—দুইটি অবিচিত্র সম্পূর্ণ নিস্পন্দ এবং অচল ; এই দুই রেখা যেয়ে চলতে গিয়ে রেলগাড়ির দৌড়ের ধারে ধারে সাইনবোর্ডগুলো যে ভাবে পড়তে পড়তে চলে যায় যাত্ৰী শ্রীরামপুর হুগলী বধমান বোলপুর—সেই ভাবে খালি দেখে যায় চোখ আম গাছ জাম গাছ লাল পার্থী কালো পার্থী এ-দেশ সে-দেশ এ-মানুষ সে-মানুষ,—মন খোজে চলাচলের বিচিত্রত। কিন্তু পায় না। সৃষ্টির কঠিন নিয়মে বাধা সমস্ত রূপ, একের সঙ্গে অন্তের ভিন্নত দিয়ে বন্দী করা, রূপ-সৃষ্টির প্রারম্ভ থেকেই রূপ-মুক্তি কামনা করে এরা মুখ তুলে চাইলে আলোর দিকে, হাত পেতে দিলে বাতাসের কাছে, কবির কাছে, চিত্রকরের কাছে জানালে এর নানা ছন্দে মুক্তি পাবার কামনা-রুপ বাজলে রূপের কান্না বাজলে রূপদক্ষের মনে, রূপের বেদনার মধ্যে রূপ সমস্ত মুক্তি লাভ করলে ; এ যেন পাথরে বাধা জল নিঝর দিয়ে ঝরলো, নদী হ’য়ে বইলো, রসের সমুদ্রে গিয়ে মিল্লো। বাঁধন থেকে মুক্তি পেয়ে রূপ র্বাচলে যখন ভাবকে সে বহন করলে আপনার মধ্যে । যে পথকে নিরেটভাবে বেঁধেছে রেল কোম্পানী কিংবা ডিষ্ট্রিক্ট বোর্ড সেই পথের রেখা আর যে পথকে বেঁধেও বাধেনি পথিক—সেই