পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৭৮
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

“গ্রামছাড়া রাঙ্গ মাটির পথ”—তার টানটোনে রূপে রসে সব দিক দিয়ে বিভিন্ন দেখা যায়। ইস্পাতে বাধা পথের রেখা আর সকাল সন্ধ্যার আলোতে সবুজ পৃথিবীর কোলে ছাড়া পাওয়া আঁকা বাক পথের টান,— একে মনকে টেনে নিয়ে যায় দিগন্তরের শু্যাম শোভার মধ্যে, অন্তে আস্ত মানুষটাকেই ঝাকানি দিতে দিতে টেনে নিয়ে চলে বন্ধ খাচায় ভরে নিয়ে। এ গায়ে ও গায়ে সে গায়ে পথিক চল্লো, তাদের কারু মনে থাকলে না যে পথ রচনা করছি, অথচ চলার ছন্দে তাদের গায়ের পথ আপনা হতেই তৈরি হ'য়ে গেল ; কিন্তু বাধা পথের রেখা ইঞ্জিনিয়ার রুল কম্পাস প্লেন ধরে তৈরি করছি বলেই টেনে চলে, কার্যেই সেট। ভয়ঙ্কর রকম ঠিক ঠাক থাকে বলেই রয়াল রোড, বা সাধারণ পথ হ’য়ে ওঠে । গায়ের পথের চলার যে ছন্দ এবং মুক্তি সেটি সাধারণ সড়ক বেয়ে চলার হিসেব থেকে স্বতন্ত্র, তেমনি ছবি মূর্তি এ সবের যে রেখা তার কোনটা বেয়ে মন চলতে গিয়ে দেখে মন রেলে বাধা গাড়ির মতো গড়গড়িয়ে চল্লে'কিন্তু রেখাকে অতিক্রম করে আর কোনো দিকে চল তার সম্ভব হ’ল না। আবার কোন রেখা গায়ের পথের মতো মুক্ত এবং স্বচ্ছন্দগতি, সেখানে পথের রেখাও যেমন মুক্ত পথের রূপও তেমনি সুবিচিত্র এবং মোটেই বদ্ধ এবং সঙ্কীর্ণ নয়, বাধা রূপ দেখা থেকে মুক্তি পেয়ে মন সেখানে ডানা মেলে’ দিলে ভাবের হাওয়ায়। গায়ের পথের রেখা সে বল্লে, আমি পথ বটে আবার পথ নয়ও বটে, আমি মুক্ত রূপ, আর রেল পথ সে কেবলি বলে’ চল্লো, আমি পথ, পথ ছাড়া আর কিছুই নয়, আমি বদ্ধ রূপ । রেলপথের মতো কসে’ বাধা রেখা আর গায়ের পথের মতো ঢিলে ঢালা রেখা দুই ধরে মন কোন দিকে কি ভাবে কত খানি পায় তার ছু একটা নমুনা যারা এই দুই পথ বেয়ে চল্লো তাদের ছটো লেখা থেকে বোঝাবার চেষ্টা করি ; যথা—“পৃথিবী জোড়া প্রকাণ্ড রাত্রি ভেদ করে . চলেছি, তখন কেবল শুনছি পায়ের তলা দিয়ে একটা ঝনঝন লৌহ নিঝরের মতে ক্রমাগত গড়িয়ে চলেছে।”—এখানে রেল চলার শব্দ তার মধ্যেও বৈচিত্র্য আসতে পাচ্ছে অল্পই, যুগ যুগান্তর ধরে যেন একটানা শব্দের পথ কেটে চলেছে গাড়িগুলো উপর নীচে আশপাশ কোনোদিকের কোনো খবরই পৌঁছুচ্চে না মনে, তাই বল্পে মন পুনরায়, “নিশাচর