পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৮৪
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

মতো–তালপাতার লেখা ছবি পাথরের ফলক এবং নানাধাতুতে নকাসীর কায করতে কাযে এল ; এই সব স্থির রেখা পাহার দিলে রূপকে, যেমন খাতার রুল টানা অংশ লেখাকে আঁকতে দেয় না বঁাকতে দেয় না তেমনি এই সব বাধা রেখা ধরে থাকলো শক্ত করে’ নানা রূপ। শ্রমজাত যে সমস্ত শিল্প তাতে রেখার বাধুনী প্রধান হয়ে উঠলে, কিন্তু মানুষের মানস থেকে জাত হ’ল যখন, তখন এ ধরণের রেখা নিয়ে কায চল্লো না, রেখাকে রূপের মধ্যে মেলাতে হ’ল, রঙের তলায় তলাতে হ’ল—এতে ওতে তাতে একত্রে গাথা হ'ল। ভাল পাথরের মূর্তি সেখানে রেখা কি সুন্দরভাবে একদিকে বাতাসে মিলিয়ে অন্যদিকে রূপটির ডৌলের সঙ্গে ওতপ্রোত হ’য়ে আছে দেখ । এই যে রেখার সংযোগ রঙের সঙ্গে রূপের সঙ্গে—এর রহস্য রূপদক্ষ জানলে, কারিগর সে তো জানলে না, তাই দুটো থাক হ’ল দুই রকমের শিল্পীর মধ্যে। কারিগর সুনির্দিষ্ট প্রকটু রেখা দিয়ে বাধলে রূপকে যেন বিনিসূতোর হারে। গাড়ীর চাকায় যে রেখাগুলি দাগলে সামান্ত কারিগর এবং যে রেখা টানলে একজন অসামান্ত রূপদক্ষ মাথার এক এক গাছি চুলের টান দেখাতে— এই দুই রকমের টান থেকে পরিখা-রেখা আর রূপ-রেখার তফাৎটা বুঝি। খোস্তা দিয়ে খুড়ে চল্লো নানা রেখা মানুষ—যুগের পর যুগ গেল রূপের সঙ্গে মিলতে পারলে না সে সব রেখt—রাপের গায়ে গায়ে থাকে কিন্তু রূপের সঙ্গে এক হ’য়ে যেতে পারে না । বৃষ্টির ধারা যেমন এক হ’য়ে মেলে বর্ষার মেঘ বাতাস আলো ছায়ার সঙ্গে, সে ভাবে মিলতে পারে না—টেলিগ্রাফের তার থেকে লটুকানো ঘুড়ির সূতোর মতো ঘরের কোণে বুলের মতো ঝুলতে থাকে রূপকে ছুয়ে ছুয়ে। খোস্তা ফেলে’ মানুষ তুলি ধরলে—যে তুলি রূপকেও টানে রেখাকেও টানে রঙকেও টানে, মানুষের মনের কথা রূপ-রেখায় ব্যক্ত হ’ল চিত্রপটে ; চারিদিকের অালো বাতাসের সঙ্গে পাথরের মূর্তির গায়ের রেখাগুলি মেলাবার অস্ত্র এবং মন্ত্র পেয়ে গেল মানুষ,—পাষাণ তখন তরল ভাষায় ব্যক্ত করলে মানুষের মনের ছবি। এমনি সঙ্গীতে ও ভাষায় সুর বার করলে মানুষ সাতটা, কথা বার করলে অসংখ্য, কিন্তু মেলাতে পারলে না কতকাল ধরে কথাকে সুরকে সঙ্গীতে ; সুর রইলো আকাশে ভেসে শকুনের মতো, কথা পড়ে রইলো মাঠে, মুর শুধু কথার গায়ে আপনার কালো ছায়াটা বুলিয়ে যেতে