পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
স্মৃতি ও শক্তি
২৮৯

দক্ষিণ বাতাস দিকে দিকে ফুল পাতার মধ্যে এমন গোপনে নিজের দিগ্বিজয়ের ইতিহাস ধরে যায় যে সকালে উঠে দেখি ফুল যেন আপনি ফুটে উঠলো আপনার কথা বলতে, পাতা সব সবুজ হ’য়ে উঠলে আপন৷ আপনি। অথচ কি প্রচণ্ড শক্তির প্রেরণা বসন্ত ঋতুর মধ্য দিয়ে পৌছয় গাছের শিকড় থেকে গাছের আগার ফুলের কুঁড়ির প্রতি পাপড়িতে তার একটু আভাস পাওয়া যায় বায়স্কোপের ফুল ফোটার নানা ব্যাপার লক্ষ্য করলে । আমরা শুধু চোখে ফুল ফোটার সবট তো দেখতে পাইনে, ধরতেও পারিনে যে একটা ফুলের পাপড়ি কেমন করে বিকাশ-শক্তির তাড়নায় আলোর দিকে বন্ধ চোখ মেলছে, কিন্তু একটা কল প্রচণ্ড শক্তির সমস্ত ঘূর্ণন নিয়ে মূর্তিমান করে ধরে যখন ব্যাপারটা আমাদের চোখে, তখন ফুলের স্বতঃস্ফত ভাব সেখানে দেখি ন, কেবল ফুলটির বিস্ময়কর বিপুল শক্তির গতিবিধি লক্ষ্য করে অবাক হ’য়ে থাকি । মানুষের রচনাতেও এই শ্রেণীর কাযের ধারা লক্ষ্য করা যায় । কবিতা সঙ্গীত ছবি যেখানে স্বতঃস্ফত নয়, কিন্তু যন্ত্রশক্তির পরিচয় দিয়েই বিস্ময় জন্মায়, সেখানে মন অভিভূত হ’ল। কালোয়াতের গানে প্রায়ই এই যন্ত্রশক্তির ব্যাপার মুস্পষ্ট হ’য়ে ওঠে এবং গীতটা মাধুর্য হারিয়ে বসে খানিক শোনার পরেই। অনেক কবিতাও দেখি যার বাধুনি চমৎকৃত করে, কিন্তু মন টানে না। এই তাক বনিয়ে দেওয়া শক্তির কায, স্মৃতির নয়। স্মৃতিসভায় গেলেই দেখা যায়, কেউ কবিত। কেউ বক্তৃতা দিয়ে শ্রোতাদের তাক বনিয়ে চলে গেল, আবার একজন হয়তে মানুষটির স্মৃতি পরিষ্কার করে’ মনোহর করে’ ছু কথায় ধরে দিয়ে গেল মনে । যার সঙ্গে যার স্মৃতি তার সঙ্গে সেই স্মৃতিটুকু মধুর করে’ নান৷ কথায় নানা ভাবে ফলিয়ে মনে ধরানোর শক্তি ধরা আছে । মানুষের সব রচনাকে মোটামুটি দুটো শ্রেণীতে ভাগ করা চলে ; একটা হ’ল শক্তিমন্ত আর একটা হ’ল শ্ৰীমন্ত রচনা । শক্তিমন্ত রচনা তারও অবশ্য শ্ৰী আছে এবং শ্ৰীমন্ত রচনা তারও মধ্যে শক্তি যে নেই ত৷ নয় ; যেমন রূপবান এবং রূপসী বলতে ভিন্ন বুঝি, তেমনি এখানে শক্তিমন্ত রচনায় একটা পুরুষভাব আর শ্ৰীমন্ত রচনায় একটা মুকুমার ভাব লক্ষ্য হয় বলেই দুটো আলাদা ঠেকে। O. P. 14-37