পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৩০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২৪
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

শিল্পীর সেরা যিনি তাঁর কি এমন অনাসৃষ্টি কারখানা হবে? কেউ পাবে সৃষ্টির রস, সৃষ্টির শিল্পের অধিকার, আর একজন কিছুই পাবে না? এত বড় ভুল কেবল সেই মানুষই করে যে নিজের দোবে নিজে বঞ্চিত হয়ে বিধাতাকে দেয় গঞ্জনা। সেইজন্য কবীরের কাছে যখন একজন গিয়ে বল্লে—প্রাণ গেল রস পাচ্ছিনে, কোথা যাই? কি করি? কোন্ দিকের আকাশে সূর্য আলো দেয় সব চেয়ে বেশি, কোন্ সাগরের জল সব চেয়ে নীল পরিষ্কার অনিন্দ্যসুন্দর—সে কোন্ বনে বাসা বেঁধেছে, রস কোন্ পাতালে লুকিয়ে আছে, বলে দিন—কি উপায় করি? কবীর অবাক্ হয়ে বল্লেন—

“পানী বিচ মীন পিয়াসী
মোহিঁ সুন সুন আওত হাঁসি।”

এক একবার ঘরের মধ্যে থেকেও হঠাৎ ঘুমের ঘোরে মনে হয় দরজাটা কোথায় হারিয়ে গেছে—উত্তরে কি দক্ষিণে কোথাও ঠিক পাওয়া যাচ্ছে না। রসের মধ্যে ডুবে থাকে আমাদের রসের সন্ধান, আর শিল্পের হাটে ব’সে শিল্পলাভের উপায় নির্ধারণ, এও কতকটা ঐরূপ।

 পাথরের রেখায় বাঁধা রূপ, ছবির রঙে বাঁধা রেখা, ছন্দে বাঁধা বাণী, সুরে বাঁধা কথা, শিল্পের এ সবই তো যে রস ঝরছে দিনরাত তারি নির্মিতি ধরে প্রকাশ পাচ্ছে; অখণ্ড রসের খণ্ড খণ্ড টুকরো তো এরা—একটি আলো থেকে জ্বালানো হাজার প্রদীপ, এক শিল্পের বিচিত্র প্রকাশ! এর অধিকার পাওয়ার জন্য কোন আয়োজন, কোন শাস্ত্রচর্চাই দরকার করে না। কাজের জগতের মাঝেই রস ঝর্‌ছে—আনন্দের ঝরণা, আলোর ঝোরা; তার গতি ছন্দ সুর রূপ রং ভাব অনন্ত; আর কোথায় যাবো—শিল্প শিখতে শিল্পকে জানতে? নীল আর সবুজ এমনি সাত রঙের সাতখানি পাতা তারি মধ্যে ধরা রয়েছে রসশাস্ত্র, শিল্পশাস্ত্র, সঙ্গীত, কবিতা—সমস্তেরই মূলসূত্র ব্যাখ্যা সমস্তই! এমন চিত্রশালা যার ছবির শেষ নেই, এমন বাণী মন্দির যেখানে কবিতার অবিশ্রান্ত পাগলাঝোরা ঝরছেই, এমন সঙ্গীতশালা যেখানে সুরের নদী সমুদ্র বয়ে চলেছে অবিরাম, এর উপরে রসকে পাবার, শিল্পকে লাভ করবার, আর কি আয়োজন মাটির দেওয়ালের ঘরে করতে পারি? এর উপরে কিবা অভাব আমাদের জানাতে পারি? Artistএর সেরা, সেরা কারিগরের সেরা—বিশ্বকৰ্মার