পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৩০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩০০
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

“মত্ত দাছুরি ডাকে ডাহুকী ফাটি যাওয়ত ছাতিয়া।” সানায়ের পে। এমন কিছু মিষ্টি নয় কিন্তু স্মৃতির স্পর্শ হ’ল তাতে, তাই মধুর লাগলো। একটা চন্দ্রোদয় কি সূর্যোদয় কি সমুদ্র কি পর্বত দেখে কোন একটা কবিতার ছতিন ছত্রের স্মৃতি মনে জাগে, সেখানে কবির স্মৃতি পথ খোলে একভাবে সাধারণের দর্শনের। নিজের চোখ এবং মন দিয়ে জিনিষটাকে ধরা হ’ল না এখানে ; তা যদি হ’ত তো সবাই রূপদক্ষ হ’য়ে যেতে | * w একই জিনিষের বর্ণনায় রচয়িতাতে রচয়িতাতে বিভিন্নতা দেখি যখন, তখন জানি রূপটিকে দুয়ের স্মৃতি দুইভাবে ধরলে। সাধারণ মানুষের বেলায় এ হয় না। তারা সবাই দেখে মাঠকে মাঠ পাহাড়কে পাহাড় সমুদ্রকে সমুদ্র মাত্র,—যেমন ভূগোলের ক্লাসের সব ছেলেই পর্বতের চিহ্নটাকৈ পাহাড় ছাড়া সমুদ্র বলে না। কিন্তু ওর মধ্যে একটা ছেলে যদি তার রচনাশক্তি থাকে তবে হয়তো সে পাহাড়ের চিহ্নটাকে এক সাপ বা বিছে দেখে ফেলে এবং মাষ্টারের ধমক খায়, সহপাঠীদেরও টিটকারি পায়, অথচ এই স্মৃতির সঙ্গে মিলিয়ে দেবার ক্ষমতা রূপদক্ষের সাধনার বিষয় এ তে অস্বীকার করা চলে না । একটা পর্বতের রূপ যে প্রকাশ-বেদনার কথা জানায়, একটি ফুলের রূপও সেই প্রকাশ-বেদনার কথা বলে। মানুষের হাতে এত বড় ভাষা নেই যে এই বেদন পূর্ণভাবে প্রকাশ করতে পারে, তাই মানুষের বুকে রূপের জন্য বেদনা বাজে, ‘রূপ দেখি আঁখি ঝুরে’। সেই বেদনার স্মৃতি বয়ে চলে মানুষ, সেই বেদনার কথা নানা মুরে ছন্দে নানা রঙে রেখায় ধরে উণ্টেপাণ্টে প্রকাশ করতে চায় মানুষ। রূপদক্ষ চায় মানুষ যে বেদন ধরলে বুকে তারি স্মৃতিকে উল্টেপাল্টে নানা ভাষায় প্রকাশ করতে। রূপের অস্তরে যে বেদনা বাজছে তারি সাক্ষী রূপ রচনা। স্মৃতির করুণ স্পর্শ দিয়ে যে সমস্ত রচনা মানুষ করে চলে তা মধুর হয়ে ওঠে, মনোহর হয়ে ওঠে, আর শুধু রূপকে দৃষ্টিশক্তি বাকৃশক্তি এই সব দিয়ে যেখানে ধরলে মানুষ সেখানে রচনাতে শক্তির পরুষ ছাপ পড়লো। রূপের সঙ্গে ভাব হ’ল তখনি, যখন রূপের বেদনার স্মৃতি রূপদক্ষের প্রাণে গিয়ে