পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৩১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩০৮
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

মানতে চায় না এই সমস্ত আরণ্যক ঋষিদের ক্রিয়াকাণ্ড, হঠাৎ মনে হয় তারা সত্যিই কেউ ছিল না আর্যদের, না হ’লে এমন করে অভিসম্পাত ? গোড়ার দল, তার বৈদিক যুগেও ছিল এখনো আছে, জ্ঞাতিবিবাদ তখনো ছিল এখনো আছে, এ-দল শাপ দেয় ও-দলকে, অথচ জাতে এক তারা—এও দেখি জগতে। এমন কোনো সভ্যতা কোনো ধম নেই যেখানে একে ও অন্তে বিবাদ ও মনান্তর নেই ;–পণ্ডিতদের মতে আমরা আর্য, ইউরোপীয়রাও আর্য, কিন্তু ব্ৰত নিয়ে মারামারি তো ঠেকেনি এতে করে । হিন্দু ব্রাহ্ম দুই দলই আর্যজাতি অথচ ব্রত এক নয়। সুতরাং আর্য ও অন্যত্রত দুটো জাতি না বলে একই জাতির দুটো থাক বলে’,কল্পনা করলে একেবারে ভুল যে হয় তা নয়—ক্রিয়ার দিক দিয়ে ভিন্ন, চিন্তার দিক দিয়ে উচ্চ এবং নিম্ন শ্রেণীতে বদ্ধ এ বল্লেও বলা চলে। চেহারায় চেহারায় ভিন্নতা, বর্ণে বর্ণে ভিন্নতা, ভাষায় ভাষায় ভিন্নতা প্রকৃতির নিয়মে ঘটছে দেখি, তাই দেখে জাতিবিভাগ স্থির করি মানুষে মানুষে ; এক দেশের শিল্পে অন্ত দেশের শিল্পে যে ভিন্নতা তাও এই ভাবে স্থির করতে যাই আমরা । কিন্তু এই বাহিরে বাহিরে ভিন্নতা এটা কি মানবতত্ত্বের কি মানবের শিল্পতত্ত্বের চরম কথা নয়—তাবৎ মানুষ যা নিয়ে এক, তাবৎ শিল্প আর্য অনার্য নির্বিশেষে যা নিয়ে এক, তাও চোখের এবং মনের সামনে এসে পড়ে। আমের মঞ্জরী সকালের কুয়াসার মধ্যে রয়েছে, আম রোদের দিনে পেকে টুস্টুস করছে,—কি রসের দিক দিয়ে কি আকার-প্রকার ভাবভঙ্গি সব দিক দিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন এর দুটি। গুটি পোকাতে আর প্রজাপতিতে এক জাতি বলে’ কিছুতে ধরা যায়ন—এ চলে মাটি অঁাকড়ে, ও চলে বাতাসে আলোতে গা ভাসিয়ে, খেচরে ভূচরে যতটা তফাৎ ততটা এই একই জীবের দুই অবস্থায় । একই মানব এবং সেই মানবজাতির মধ্যে একমাত্র আর্যগণকে নিয়ে প্রকৃতিদেবী যে ওলট পালট খেলেননি এই ভাবে তা কে বলবে ? মাটি হ’ল সোনা, জল হ’ল মেঘ, কাচ হ’ল হীরক, কালো হ’ল সাদা, যুগযুগান্তর বহে এই খেলার স্রোভ চলে আসছে এটা তো অস্বীকার করা যায় না। আজকের সৌরজগৎ একদিন এক টুকরো নীহারিকার বাষ্প ছিল এ কথা যদি মানতে পারি, তবে আর্য শিল্পের গোড়া পত্তন আর্য্যেতর শিল্পে একথা মানতে দ্বিধা হবে কেন ।