পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৩২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩১৮
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

রাক্ষসদের কাছ থেকে এসেছিল, কেননা লঙ্কায় মায়াসীতার খবর রামের অশ্বমেধের অগের ঘটনা। রাবণের পুষ্পক রথ এবং রাবণের পুরীর যা বর্ণনা পাওয়া যায় তা থেকে বুঝি যে, আর্যেতর সমস্ত জাতি তারা কলাকৌশলে ভারতবাসী আর্যদের অপেক্ষ অনেকখানি এগিয়ে গেছে । মহাভারতের যুগে ভারতীয় আর্যের সভ্যতার প্রায় চরম শিখরে উপনীত দেখা যায়। কিন্তু তখনও দেখি যুধিষ্ঠিরের সভা প্রস্তুত করতে এল শিল্পকার ময়দানব, কিরাতের ঘর থেকে এল গাওঁীব অজুনের । এমনি সব খুটিনাটি কথা থেকে ধরা যায় আর্যেতর তারাই ছিল আর্টিষ্ট এবং কারিগর, রূপ দিতো তারা কল্পনাকে । এর বিশ্বের তাবৎ রূপকে দখল করতে পারতে বিদ্যার দ্বারা—সেইজন্য অনেক সময় এদের যাদুকর ভাবা হত। মায়াবী আর শিল্পী এ দুয়ের মধ্যে পরিষ্কার ভেদ অনেক দিন করেনি মানুষT §s ঋষির যে সব দেবতার কল্পনা করে গেলেন তাদের মধ্যে ইন্দ্রকেই র্তার প্রধান স্থান দিলেন কিন্তু ইন্দ্রের প্রতিমা তার গড়েননি, ধ্যানমাত্র দিয়েছিলেন। রামায়ণ মহাভারতের সময়েও ইন্দ্রের মূর্তি নেই। রাজার পর রাজা নরেন্দ্র যথার্থভাবে ইন্দ্রত্ন পাবার জন্ত শতাশ্বমেধের আয়োজন করেছেন, সেখানে ইন্দ্রের বাহন অশ্ব এবং ইন্দ্ৰধ্বজ দুইই পূজা পায় কিন্তু স্বয়ং প্রতিমাটির দেখা নাই। সুমন্ত্র সারথি ইন্দ্রের রথ নিয়ে আসেন নরেন্দ্রের জন্ত, ইন্দ্রও আসেন পৃথিবীতে, কিন্তু তার রূপ ধরা পড়ে না আর্টিষ্টের কৌশলের মধ্যে। এইভাবে চলতে চলতে একদিন ইন্দ্রপূজা বন্ধ হ’য়ে শ্ৰীকৃষ্ণের পূজা আরম্ভ করে দেয় বৃন্দাবনের গোপজাতি । তার পর আসেন আর্যেরা গোপজাতির অনুসরণে পূজা দিতে নতুন দেবতাকে। এই ভাবে দেখি দুই যুগের তুই দেবতা স্ত্রীরাম ও শ্ৰীকৃষ্ণ বৈদিক ইন্দ্রের স্থান পেয়ে বসেছেন । বৈদিক ইন্দ্রের পাশে ইন্দ্রাণীকে দেখিনে, মরুৎগণকে দেখি, কিন্তু রামের পাশে সীত, শ্বামের পাশে রাধা—এও জানাচ্ছে আর্য অনার্য দুই সভ্যতার পরিণয়ের ইতিহাস । মূর্তিপূজা এবং প্রতিমা-শিল্পের সূত্রপাতেই বুদ্ধের আবির্ভাব হয়। তত্ত্ব-চিস্তার দিক দিয়ে ভারতবাসীর মন তখন উপনিষদের একেশ্বরবাদ থেকে শূন্তবাদে পৌঁছে গেছে, কিন্তু শিল্পকলার দিক দিয়ে ভারতবাসী তখন দেখি সবে কাটতে শিখছে পাথর। সেই পুরাতন যুগের বনস্পতি,