পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৩২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩২০
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

পর কুঞ্চিত-কেশ নকল বুদ্ধ দিয়ে গেল, আসল বুদ্ধমূর্তি সম্পূর্ণ অন্যভাবে গড়া হ’ল দেখি অনুরাধাপুরের অরণ্যে এই বুদ্ধ-প্রতিমা পাওয়া গেল বুদ্ধের নির্বাণের অনেক শত বৎসর পরে—বহির্ভারতের এক শিল্পীর গড় প্রতিমা । সেখানে ঋষিপ্রতিম একটি মহাপুরুষ, কোনো সাজসজ্জা না দিয়ে গড়েছেন শিল্পী, চেখভোলানো চাকচিক্য বা সৌন্দর্য মোটেই নেই ঐ মূর্তিতে। রূপবান পাথর ধাননিমগ্ন—এই টুকুই দেখালেন শিল্পী। সেই যুগযুগান্তরের আরণ্যক অবস্থার কথা স্পষ্ট হয়ে দেখা দিলে, বৌদ্ধ সভ্যতার চরম ক্ষণে আবার উচ্চারিত হ’ল ভারতের বাহিরে সমুদ্র পারে —“যিনি পর্বতের ন্যায় প্রবৃদ্ধ ও মহান এবং যিনি তেজস্বী”।. বৈদিক কাল থেকে আরম্ভ করে অনেক যুগ ধরে অদ্বিতীয় ঈশ্বরের ধারণাতে পৌছেচে যখন মানুষের মন গভীর জ্ঞানের ধারা ধরে, সেই সময় থেকে রসের ধারা ধরে চলতে সুরু করলো শিল্পীদের মানস সারা বৌদ্ধযুগ অতিক্রম করে অদ্বিতীয় বুদ্ধমূর্তির ধারণাতে পৌছোতে। জ্ঞানীর পথে যেমন নানা জটিল ও বিচিত্র তর্ক-বিতর্ক, শিল্পীর পথেও তেমনি নানা কমের নানা রীতি-পদ্ধতির বিচিত্রতা গিয়ে মিল্লো একটি কেন্দ্রে ; জ্ঞানী বল্লেন, “বৃক্ষৈব স্তব্ধোদিবি তিষ্ঠত্যেকঃ", শিল্পী দেখালে—স্তব্ধ মূর্তি ! এই বৌদ্ধযুগ, আর্য এবং অন্তব্রত, কুরু এবং পাণ্ডবদের ইতিহাসের আর একবার যেন পুনরাবৃত্তি হ’তে দেখি বৌদ্ধভিক্ষু এবং ব্রাহ্মণগণের ধর্ম-সংঘর্ষে, ধম রাজত্বে ইন্দ্রত পাবার জন্য সংগ্রাম, একের জন্য অনেকের সমাবেশ । ধমে একাধিপত্য এবং কমে একাধিপত্য এই হ'ল বৌদ্ধযুগের পরের ইতিহাস। রাজতন্ত্র যেমন, তেমনি ধমতন্ত্র শিল্পতন্ত্র সমাজতন্ত্র একই সঙ্গে বিধিবদ্ধ হ’তে চল্লেী শিল্পের দিক দিয়ে। আরণ্যক ঋষিদের তেত্রিশ কোটি দেবতা নতুন করে বিধিবদ্ধ ভাবে গড়ে তোলবার কায আরম্ভ হতেই সেই আর্যেতর শিল্পীদের মতামত নিয়ে টানাটানি পড়ে গেল— ময়শিল্প মত, দৈত্যগুরু শুক্রাচার্যের মত অনুসারে গড়া হয়ে মন্দিরচুড়া সমস্ত অরণ্য আর পর্বতের প্রতীক এবং প্রতিমা হয়ে দেখা দিলে—হিন্দু সভ্যতার উৎকর্ষের যুগেও মানুষ পাথরকে পর্বতকে অরণ্যকে তুলতে পারলে না—ত্রিলোকের প্রতিমা দিয়ে লোকারণ্য হয়ে উঠলো মন্দিরের