পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৩৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩২৮
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

নিয়ে অঙ্কনের ছন্দ, সুরের কাঠিন্য মিল্লো গিয়ে মীড়ের তারল্যে এই হ’ল গায়নের ছন্দ। সবদিকেই রূপ দেবার বেলায় এই ছন্দ না ধরে’ উপায় নেই। “চক্ষুগ্রহিং ভবেন্দ্রপম্‌” কিংবা “নকু রূপাণি পশুস্তি”। দৃশ্ব রূপের কঠিন অংশের সম্বন্ধে একথা খাটলো, কিন্তু যে সব রূপ মনে গিয়ে পোছচ্ছে চোখে পড়ছে না, কিন্তু অনির্বচনীয় স্পর্শটুকুর উপরে যার নির্ভর এমন সব তরল রূপ ? তার বেলায় মনশ্চক্ষু প্রাণরসন ইত্যাদি না নিয়ে সেখানে কায চল্লো না। রূপের এই রহস্য জেনেই বাউল কবি বলেছেন— “চোখে দেখে প্রাণে ঠেকে ধুলো আর মাটি প্রাণ রসনায় দেখরে চাইখ্যা রসের শাইখ্যাটি !” চোখে দেখি এক রূপ প্রাণে দেখি অন্য রূপ এই হ’ল রূপের দুই প্রকাশ। দৃষ্টির পথে যেমনি চোখোচোখি অমনি অভিসার রসরূপে মানসকুঞ্জে । হয়তো সে একটি রূপ যৌবনে পরিপূর্ণ হয়তো সে একটি রূপ নু্যজ কুজ জরাজীর্ণ, হয়তো সে একটি গাছের তলায় হরিণশিশু, হয়তো সে একটা ছাতা মাথায় ব্যাঙ, কিন্তু দৃষ্টিপথ ধরে মনে পৌছোলে কি সেটি রসের বস্তু হ’ল রূপদক্ষের কাছে— “সই কিবা সে সুন্দর রূপ চাহিতে চাহিতে পশি গেল চিতে বড়ই রসের কূপ।” মানুষের মন বা চিত্তপট তো ক্যামেরার প্লেট নয় যে চোখ খুল্লেই ধরলে ছবি বুকে, কার কাছে কি যে মনোরম ঠেকে, কোন রূপটা কখনই ব। প্রাণে লাগে তার বাধার্বাধি আইন একেবারেই নেই ; কিন্তু মনে না ধরলে সুন্দর হ’ল না, মনে ধরলে তবেই সুন্দর হ’ল—এ নিয়ম অকাট্য । ‘মনের মানুষ মনের মতো ঘরখানিতে?—এ তে কথার কথা নয়। রূপের ঠাট এক বাইরের মতো আর এক মনের মতে, ফটো দেয় বাইরের ঠাট রূপদক্ষ দেন মনোমত রূপের ঠাট সমস্ত । উটের কিম্বা পেচার ও ব্যাঙের বাইরের ঠাট বিধাতার মনোমত হ’লেও সাধারণ লোকে দূর দূর করলে দেখে। তবেই বলি সাধারণ মানুষের মনোমত হবার মতে রূপ পেলে না তারা, কিন্তু রূপদক্ষের রূপস্থষ্টির নিয়ম—যা হ’ল নিয়তিকৃত নিয়ম থেকে স্বতন্ত্র—তার রসে উটের রূপ