পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৩৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩৩০
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

কেদার নৌকো বাড়ীর কত কি রূপ,—এক নিয়তির নিয়মে গড়াই হ’তে পারে না মানুষের চৌকি টেবিল বাক্স তোরঙ্গ । আলঙ্কারিকের এই রকমের শিল্পকার্য সমস্তকে বলেছেন বন্ধচিত্র। দুই সৃষ্টিকতার নিয়ম স্বীকার করে তবে হয়েছে টেবিল চৌকি সোনারূপার অলঙ্কার ইত্যাদি ইত্যাদি । উনি দিলেন মাত্র কাচ সোনাটুকু, ইনি দিলেন পাকা সোনার কর্ণফুলের রূপ লাবণ্য ভাব ভঙ্গি সবই ; উনি দিলেন কাঠাল গাছ, উনি দিলেন কাঠাল কাঠের রাজ-তক্ত। এমনি দুই আর্টিষ্ট মিলে’ হ’ল গঠন সমস্ত । এই জন্য বলা হ’ল বেদে– আমাদের শিল্প দেবশিল্পীর অনুরণন দেয়। এ-শিল্পীর ও-শিল্পীর বন্ধুতার ফলে হ’ল এই সব নানা প্রবন্ধে নানা ছন্দে দেওয়া রূপ সমস্ত, শুধু নিয়তির নিয়ম লঙ্ঘন করেই হয় না আর্টের জগতে রূপস্থষ্টি । মনে ক’রে না যেই টেবিল চৌকি গড়ে সেই হ’য়ে ওঠে দ্বিতীয় স্বষ্টিকত৭ ; কেননা রূপ-সাধন সে সহজ সাধন নয়। কোন চৌকিতে বসলেই উঠি উঠি মন করে, কোন কেদারা'এমন আরামের যে বসতেই শ্রান্তি দূর, সঙ্গে সঙ্গে নিদ্রার আবেশ । ফুটবল খেলা দেখতে মত্ত থাকি বলেই বুঝতে পারিনে ফুটবলের চার আনার বেঞ্চ একজন রূপদক্ষে গড়েনি—সে প্রায় স্থষ্টিকতার কাঠখানাই বেঞ্চ বলে’ চালিয়ে বঞ্চনা করছে দর্শকদের । রূপদক্ষ নিজের মনোমত রূপটি রচনা করেই খালাস, যে রূপ দেখবে তাদের কথা রূপদক্ষকে একেবারেই ভাবতে হয় না—এ একটা কথাই নয়। আমার যা খুসি রোধেই খালাস তুমি খেয়ে দূর ছাই কর তাতে এল গেল না—এ কোনো ভাল রাধুনীই বলে না। আমার মনোমতকে দশের ও দশ হাজারের মনোমত করে দিলেম—এতেই আনন্দ হ’ল রূপদক্ষের । রূপ দেবার শত সহস্র নিয়মের যে দেখা পাই রূপবিদ্যার চর্চার বেলায় তার কোন প্রয়োজনই ছিল না যদি না রচনা সমস্তকে তোমারো মনে ধরাবার দরকার হ’ত । ছেলে কাদা নিয়ে খেলে, কত গড়ন গড়ে সেও, কিন্তু রূপের কোন নিয়ম তার কাছে নেই, সে যথেচ্ছা গড়ে চলে কিন্তু সেও থেকে থেকে কোনো একটি দর্শকের তারিফ পেতে কায হাতে ছুটে আসে। কাজেই দর্শক ও প্রদর্শক চাই-ই থাকা ।