পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৩৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
দৃষ্টি ও সৃষ্টি
৩১

লোহার রেলিং ত্রিশূলের আকার না বর্শার ধরণ? একশ’র মধ্যে একজন ছাত্র চট্ করে বলতে পারে কি না সন্দেহ। একটা রেলিং আছে এইটুকুই টুকে আসছে চোখ মনের নোট্ বইখানায় যন্ত্রের মতন, রেলিংএর কারুকার্য গড়ন পেটন নিবিষ্ট হয়ে দেখার প্রয়োজন এবং অবসরের দরকারই বোধ করেনি চোখ। খুব ছোট থেকে খুব বড় বয়সেও আমাদের বুদ্ধির কোঠায় দর্শন স্পর্শন শ্রবণ এরা অহোরাত্র খবর পাঠাচ্ছে; বাইরের ঘটনা বাইরের বস্তুর পরিষ্কার একটি-একটি চুম্বক রিপোর্ট চট্‌পট্‌ বুদ্ধির ঘরে টেলিগ্রাম করাই এদের সাধারণ কায। রাত পোহালো চোখ ঝাঁপ খুলেই দেখলে আলো হয়েছে, অমনি সঙ্গে সঙ্গে তার গেল বুদ্ধির কাছে—“রাতি পোহাইল, উঠ প্রিয় ধন, কাক ডাকিতেছে কররে শ্রবণ”। সকাল, এই বুদ্ধি অমনি জাগল মানুষের, দ্বিপ্রহরের রোদ চন্‌চনে হয়ে উঠলো অমনি স্পৰ্শন বুদ্ধির কাছে তার পাঠালে “ভানুতাপে তাপিত ধরণী”, মধ্যাহ্ন, বুদ্ধি উদয় হল মানুষের। এমনি অষ্টপ্রহর বুদ্ধির তাঁবেদারি করতেই কাট্‌ছে দিন দর্শনের স্পর্শনের শ্রবণের! একেবারে ঘড়িধরা এদের কায একটু এদিক ওদিক হলেই মুস্কিল—কুয়াশা বেশি হলে, বাদলা ঘন হলে এই প্রহরীরা অনেক সময়ে ঠিক ঠাউরে উঠতে পারে না সকাল কি সন্ধ্যে, টেলিগ্রাফে ভুল থেকে যায়, বিছানা ছাড়তে বেলা হয়, ভাত চড়তে তিনটে বাজে, এমনি নানা বিশৃঙ্খলা উপস্থিত হয় নিত্য কাযে। তখন বার বার ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখতে হয়, নয় তো জানলা খুলে বাইরে উঁকি দিতে হয় ক্রমান্বয়ে। শুনে দেখি, চেয়ে দেখি অথবা পরশ করেই দেখি, সাধারণ মানুষের জীবনে এই তিন দেখার সম্পর্ক হচ্ছে বস্তু-জগতের যেগুলো সচরাচর ঘটনা এবং বাইরের যে মোটামুটি খবর তারি সঙ্গে। প্রহরীর কায খবরদারীর কায; এর বেশি কায এদের দেওয়ার দরকারই হয় না জীবনে ইতর জীব থেকে মানুষ পর্যন্ত কারু, অতএব বলতেই হ’ল চোখ কান হাত এমনি সবার স্বাভাবিক কায ও অবস্থা হয় চট্‌পট্‌ দেখা শোনা ছোঁয়া ও জানা যান্ত্রিকভাবে। চোখে দেখলেম বাইরের পদার্থ তার রূপ রং ইত্যাদি, পাঁচ আঙ্গুলে পরশ করে দেখলেম সেগুলো; শুনে দেখলেম বাইরের খবরাখবর, এই ভাবে জগতের বস্তু ও ঘটনার বুদ্ধিটা বেড়ে চল্লো মানুষ থেকে ইতর জীব তাবতেরই। মুখ চোখ কান হাত পা সব দিয়ে জীব যেন পড়ে চল্লো বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বিদ্যাসাগরের