পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৩৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাব ややQ সবাই জেগে বিশ্বে। বিচিত্র রকমে হয় ভাবের ক্রিয়া চরাচরের যা কিছু তার উপরে। একটা গাছ এক মনোভাব নিয়ে দেখলেম একরকম, পর মুকুতে ই অন্তভাব নিয়ে দেখলেম সে অন্তরূপ । একই বস্তুকে আমি দেখি একভাবে, তুমি দেখ অন্যভাবে । ফুল-পাতায় সেজে এই দেখা দিলে গাছ একভাবে, ফুল পাতা ঝরিয়ে দেখা দিলে সেই গাছই আবার অন্তভাবে। আমরা কখনো নিজের ভাবে চরাচরকে বিভাবিত দেখি কুখনো বা নিজের অন্তরকে বিভাবিত দেখি চরাচরের ভাবের দ্বারা । ভাবুকের রচনা থেকে এবং আমরা নিজের নিজের কাছ থেকেও এর প্রমাণ পাই। " সূর্যের আলোয়, রুদ্র তেজস্বিতা ইত্যাদি অনেক ভাব, চাদের আলোয় শীতল কান্ত নানা ভাব । সূর্যের এক রকম ভাব, জলের এক রকম, আকাশের অন্য রকম ভাব । ঋতুতে ঋতুতে চরাচরের ভাবপরিবতন এসব চাক্ষুষ ও প্রত্যক্ষ প্রমাণ ভাবের ক্রিয়ার। অবস্থাভেদে ভাবভঙ্গির ভেদ, ভাবের ভেদে নানা অবস্থাভেদ দেখতে পাই আমরা ;– শয়ন, উপবেশন, গমন, গমনের ইচ্ছা, হাত মুখ চোখ ইত্যাদি নেড়ে বলা কওয়া, সভাতে গম্ভীর হয়ে বসা, পাতে বসে যাওয়া ভোজে, বর সেজে আগমন, তালঠকে মারামারি করতে যাওয়া, খেলা করতে এগোনে, কোমর বেঁধে কাজ করতে চলা, নৃত্য করা ঘুরে ফিরে তালে তালে, যেন নাচবে। এইভাবে নড়ে চড়ে ওঠা আনন্দে,—ক্রীড়া কৌতুক নিদ্রা সব অবস্থাতেই ভাব এক এক রকম, ভঙ্গি ও এক এক রকম ; ভাব থেকে ভাবান্তর, অবস্থা থেকে অবস্থান্তর—এই হ’ল চরাচরের গতিবিধির নিয়ম । - হাব ভাব দিয়ে আসল ভাবটা ব্যক্ত করা হয় যেমন তেমনি আবার হাবভাব দিয়ে আসল ভাবটা-যেটাকে বলতে পারি স্বভাব অভিপ্রায় (intention)—তাকে গোপন করাও হয় ; যে চাবি খুল্লেতালা সেই চাবিই বন্ধ করলে তালা । অভিনেতাকে নিজের ভাবট ধরে চল্লে তো চলে না, কেননা নিজের মনোভাব যাই থাকুক সেটা গোপন রেখে নায়কের ভাবটা অভিনয় করে দেখাতে হয়। হয়তো বাড়িতে কোনো দুর্ঘটনার চিন্তায় মুহমান অভিনেতা, কিন্তু দেখাতে হচ্ছে অভিনয়ক্ষেত্রে তাকে বেশ ফুর্তিবাজ নায়কের ভাব । চোর তার মনে মনে কুভাব, কিন্তু বাইরে দেখাচ্ছে সাধুর ভাব উদ্দেশ্য-সিদ্ধির জন্য। ছবিতে কবিতায় ভাব