পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৩৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাব ৩৬৭ অলঙ্কার দিয়ে সাজালে না আর্টিষ্ট, কেবল ভাবযুক্ত করে ছেড়ে দিলে ; একগোছা শুকনো পাতা—শীতের বাতাস তার রঙ ঢঙ সব হরণ করে’ মাটির উপরে ছড়িয়ে দিয়ে গেল শুধু একটু ভাবযুক্ত করে; এক পাট সাদা কাপড় তাতে সকালের শিশির—ভাব দিয়ে বুনে গেল আর্টিষ্ট । বস্তু সামান্য ঘটনা সামান্য কিন্তু ভাবযোজনাতে অমূল্য অসামান্য অরূপ হয়ে উঠলো সবাই–এর প্রত্যক্ষ প্রমাণ আমাদের ঘরে বাইরে যথেষ্ট্র ধরা রয়েছে। ভাব দিয়ে ধূলো-মুঠোকে সোণ-মুঠো করে দিচ্ছে আর্টিষ্ট,—এ রোজই ঘটছে চোখের সামনে আমাদের। ভাবুকের হাতে এক তাল কাদা, একখানা পাথর, একটা কাঠ যেমন ভাব পায়, রূপ পায়, তেমনি কথাগুলো তেমনি স্বরগুলোও ভাব পেয়ে ষায় রূপ পেয়ে যায় যখন তখন বলতে পারি বস্তু ভাষা ও সুর এরা পাষাণী অহল্যার মতো জেগে উঠলে ভাবের স্পর্শে। ছবি যে লিখছে তার হাতে গোটাকতক রেখা আর তাদের গোট|কতক ভঙ্গি,—দাড়ি কসি ইত্যাদি বোঝাতে রইলো উন্নত আiনত অবনত এমনি গোটাকতক অবস্থা, এই নিয়ে ভাবুক সে কখন একটান কখন দুটান মিলিয়ে এক একটা ভাবযুক্ত রূপ লিখছে, রেখার ভঙ্গি দিয়ে জানাচ্ছে— বক দাড়ালো, বক উড়লো। বক ঘুমোলো, উড়ি উড়ি করছে বক, চলি চলি করছে বক—এমনি নানা ভাব নানা ভঙ্গি গোটাকতক রেখায় রেখায়। ঝরণা করছে, সমুদ্র গর্জন করে ফুলছে—সবার ভাব রেখার ফঁাদে ধরে নিচ্ছে ভাবুক ও আর্টিষ্ট । দপ্তর তো রেখা বিষয়ে পাক। কিন্তু কই তার দ্বারা তো ভাবযুক্ত রেখা টানা কোনো কালেই হয় না। রূপের আর বস্তুর মূল্য তার ভাবসম্পদে না হ’লে একটুকরো পাথর ছেড়া কাগজ দুটো একটা রঙ বা রেখা তার মূল্য কি ? রূপকথায় শুনেছি—পাতার ঠোঙায় কোন এক রাজকন্যার একগাছি চিকণ কেশ তাই দেখে বিভোর হ’ল ভাবে রাজপুত্র। এটা রূপকথা সুতরাং কথার কথা বলতেও পারে, কিন্তু আকাশের প্রাস্তে কাজল মেঘের সরু একটি টান সেটা দেখে যে কবির ভাব জাগে তার কি ! শুনেছি চীন দেশে তারা একটা তুলির টান দেখে রস পায়। সাদা কাগজে একটি টান, অন্ধকারে একটি আলোর রেখা—এ সব ভাব জাগায় কি না পরীক্ষা করে দেখলেই পারে।