পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৩৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩৬৮
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

জোর করে কারু সঙ্গে ভাব হয় না, জোর করে’ রচনাতে ভাব ঢোকানো চলে না। অভিনেতা কিংবা গায়ক যখন একেবারে চোখ আকাশে তুলে কতকগুলো কৃত্রিম হাব ভাব করে তখন ধরা পড়ে যায় তার চেষ্টা আপন হ’তে, এমনি ছবিতেও একটা যেমন-তেমন কিছুকে খানিকট ভঙ্গি দিয়ে ছবির নীচে বড় কবির একটা কবিতা জুড়ে টেনে বুনে ভাবযুক্ত ছবি করতে চল্পে রচয়িতার ও রচনার ভাবের অভাবই অনেক খানি ব্যক্ত করা হয়। আর্টিষ্ট নানা উপায়ে ভাবযোজনা করে থাকে রূপ-রচনাতে। প্রথমত; ডৌল দিয়ে ভাবটা প্রকাশ হ’ল, তারপরে সাজসজ্জা দিয়ে ভাব প্রকাশ হ’ল, অঙ্গভঙ্গি ও সাজগোজ, এই দুই দিয়ে ছবিতে মূর্তিতে ভাবট ধরা পড়লে । কুটির আর রাজবাড়ি দুটোর ভাব-ডৌল ও সাজ দুই মিলিয়ে একটা । সিংহদ্বারে আর খিড়কির দরজায় আঙ্গিক ভেদ এবং সাজসজ্জাতেও ভেদ। এমনি অনেক সাজসজ্জা বোঝায় উৎসবের ভাব, সাজসজ্জার অভাব বোঝায় উৎসবের অভাব দীনতা কত কি ! অভিনয়ের সময়ে পরীকে দৈত্যকে খালি সাজ ও ডৌল দিয়ে প্রকাশ করি যেমন তেমনি ছবি মূর্তির বেলাতেও সাজের আর ডেলের তারতম্য দিয়ে বোঝাই রূপের ভিন্নতা এবং ভাবেরও ভিন্নত। পৈতের দিনে হঠাৎ ছেলেটা মাথা কামিয়ে গেরুয়া বসন পরে দণ্ড কমণ্ডলু ধরে যে হুবহু দণ্ডী বনে যায় তার মূলে সাজ আর ডৌল ফেরানোর কায়দা। বিয়ের দিনে বরবধূর ভাবযুক্ত রূপ এই কৌশলেই প্রকাশ হয় চোখের সামনে । এগুলো হ’ল সহজ উপায় আর্টিষ্টদের হাতে, ভাব ফোটাতে চলে তারা নানা রঙ চঙ ইত্যাদি দিয়ে। এখন একটা দোকানঘরের ভাব আছে, বসতঘরের ভাব আছে,—দোকানীর তৈজসপত্র দিয়ে বোঝানো গেল দোকানটা, বসতবাড়ির নানা জিনিষ দিয়ে বোঝালেম এটা বসতবাড়ি, কিন্তু সাহেব কোম্পানীর দোকান সেখানে বাড়ির ডৌল রাজবাড়ীর মতে, ভিতরের সাজও যেন একটি ড্রয়িংরুম বৈঠকখানা কি দোকান বোঝাবারই জো নেই—এখানে দোকানি আসবাব খানিক জুড়ে তবে বোঝাতে হ’ল এটা দোকান। কাজেই দেখতে পাচ্ছি কি বাইরের দৃশুটার ভাব কি নিজের অন্তরের ভাব হুই কাযেই আর্টিষ্টকে ভাবোপযোগী রেখা রূপ প্রভৃতি জুড়ে দিতে হয় রচনাতে—একেবারে পরিকল্পনা