পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৩৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩৭৪
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

ধোয় হ’য়ে গেল গাছ-পালা—প্রকাশ হ’ল পূর্ব লাবণ্য তাদের। জলভরা মেঘ সে এক লাবণ্য এক সোয়াদ দিলে চোখে ও মনে, জলবর মেঘ সে অার এক লাবণ্য অার এক সোয়াদ ধরলে সামনে । লবণের সংযোগে বস্তুর স্বাভাবিক তারের সঙ্গে সুস্বাদ যেমন মিলছে দেখি রন্ধনশিল্পে, তেমনি লাবণ্যের যোগে অন্যান্য শিল্পেও রূপ প্রমাণ ভাব সমস্তই চোখের এবং মনেরও তৃপ্তিদায়ক হয়ে উঠছে এবং তখন দর্শকের শ্রোতার পাঠকের ভাল লাগছে রচনাটি। পলাবণ্য তো অনুভব করি এবং চোখেও দেখি এক সঙ্গে, অথচ জিনিষটা এমনই যে পাকাপাকি একটা ব্যাখ্যার মধ্যে ধরাছোয় দিতেই চায় না। কথায় বলে মণিকাঞ্চন যোগ-পিত্তল ও মণি, কিংবা তাম্র ও মণি, দ্বন্ত ও মণি, রজত ও মণি অজস্র শিল্পকাজে ব্যবহার হচ্ছে দেখি। মণি সোনায় বাধা হ’য়ে একটি লাবণ্য দেয়, পিত্তলে তামায় রৌপ্যে ও গজদন্তে বাধা হ’য়ে আর এক রকমের লাবণ্য পায় দেখি, এমনি শিল্প-রচনাটি ভাবভঙ্গির দিক দিয়ে, মান-পরিমাণের দিক দিয়ে এবং রূপের দিক দিয়ে লাবণ্যের সংস্পর্শ পেয়ে গেল তবেই সুন্দর তার দিলে আমাদের । রূপ সমস্ত বিভিন্ন, প্রমাণ তারাও স্বতন্ত্র স্বতন্ত্র, ভাব সমুদয় নানা ভঙ্গিতে বিভক্ত, লাবণ্যের ঘেরে এর এক হ’য়ে বাধা পড়ে যখন তখনই হয় মনোহর। সোনাতে সোহাগার কাজ করার মতো কাজ হ’ল লাবণ্যের। “মুক্তাফলেষু ছায়ায় স্তরলত্বমিব” । তরঙ্গায়মাণ হচ্ছে লাবণ্য এই বল্লেন রসশাস্ত্রকার। রূপে প্রমাণে ভাবে একটা তরলতা দেয় লাবণ্য এই হ’ল ভাবটা । যে সব রেখা রূপ দিতে আছে, মান পরিমাণের বাধুনি শক্ত করে বেঁধে দিতে আছে, ভাবভঙ্গি বাধা রকমে প্রকাশ করতে আছে—সেই সব দস্তুরমতে টানা রেখা রুল কম্পাসের শক্ত রেখা, তারি মধ্যে লাবণ্য যোজনা করা চাই তবে তারা অার্টের কাজে আসে—না হ’লে অফিসের দপ্তরখানার মিস্ত্রীখানার মধ্যেই বদ্ধ থেকে যায়। সাদা কথায় বলা গেল—উত্তরের আকাশে মেঘ লেগেছে। ঘটনাটা বোঝালে কাটা কাটা কথাগুলো, কিন্তু নড়ে না চড়ে না যতটুকু বলবার বলে চুকলো এক আঁচড়ে। এই কথাগুলোকে একটু গুছিয়ে বলা গেল—উত্তরেতে মেঘ লেগেছে ;–কাট কাটা কথা বেশ একটু দোলন পেলে লাবণ্যের স্পর্শ হতেই। আরো সুন্দর হ’ল যখন বল্লেন কবি—মেঘৈমেট্রিমস্বরম ইত্যাদি। লাবণ্যের