পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৩৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
দৃষ্টি ও সৃষ্টি
৩৩

নিন্দা ও কঠিন সমালোচনা করে বসবে, কবিতা কল্পনা এ সবকে সে বলবে পাগলামি এবং ঠিক এখন সাধারণ মানুষ আমরা যেমন শিল্পশালায়, সঙ্গীতশালায় বা অভিনয়-ক্ষেত্রে ব্যবহার করি, অর্থাৎ বাস্তবের সঙ্গে শিল্পকার্য যতটা মেলে ততটা তার বাহবা দিই, একটু বাস্তবিকতার ভ্রান্তি উৎপাদনের ব্যাঘাত হলে বলে বসি ‘দূর ছাই’, কলের পুতুলটিও ঠিক সেই ব্যবহারই করবে। সাধারণতঃ শরীর-যন্ত্রগুলো আমাদের প্রবল বস্তু-পরায়ণতা নিয়ে দেখতে শুনতে পরশ এবং পরখ করতেই পাকা হয়ে উঠছে দিনের পর দিন। সারাজীবন বারে বারে একই জিনিষ দেখে শুনে, পরশ করে পরখ করতে করতে কাজের দক্ষতা এমন বেড়ে যায় হাত পা চোখ কানের, যে মেকি টাকা, ভেজাল ঘী, পাকা ও কাঁচা, সরেস ও নিরেস ছোঁয়া মাত্র দেখা মাত্র শোনা মাত্রই তারা ধরে দিতে পারে; কিন্তু এটুকু হয় শুধু আশপাশের বস্তুগুলোর সঙ্গে অনেক দিনের পরিচয়বশতঃ। শরীর-যন্ত্র, নিত্য ব্যবহারের নিত্য কাযের বস্তু ও ঘটনাগুলোর সম্বন্ধে এই অভ্রান্ত বস্তু-পরিচয়ের পাঠ সাঙ্গ করেই থেমে রইলো, এই হলো সাধারণ মানুষ হিসাবে আমরা দর্শন স্পর্শন শ্রবণ দিয়ে যতটা এগোতে পারি তার চরম পরিণতি। মানুষের দেখা শোনা ছোঁয়া সমস্তই কায ও বস্তু এবং বাস্তবিকতার সঙ্গে লিপ্ত হয়ে রইলো, নিখুঁত করে চিনে নিতে পারলে, অভ্রান্তভাবে ধরতে পারলে বাইরের এটা ওটা সেটা, এ ও তা, এমন তেমন ইত্যাদি বস্তু ও ঘটনা এই যে জ্ঞান একে বলা যেতে পারে বস্তু-বুদ্ধি বা বাস্তব-বুদ্ধি—কিন্তু কিছুতেই একে বলা চলে না বস্তুর রসবোধ শিল্পবোধ সৌন্দর্যবোধ অথবা অর্থবোধ। মানুষের এই বস্তুগত দৃষ্টি চিরদিন তার স্বার্থ-বুদ্ধির সঙ্গেই জড়ানো থাকে। নিত্য জীবনযাত্রার সঙ্গে আশপাশ থেকে যারা এসে মিলছে তাদেরই খবর আমরা দিন রাত অভ্রান্তভাবে নিয়ে চল্লেম এই বস্তুগত দৃষ্টি দিয়ে। ময়রা যেন চমৎকার মিঠাই গড়ে চল্লো মিঠাইয়ের রসবোধ করার কোন অপেক্ষা না রেখেও! কিম্বা জহুরী রত্ন-পরীক্ষায় এমন পাকা হয়ে উঠলো যে হাতে নিয়েই বলতে পারলে সামগ্রীটা কাচ কি হীরে, সরেস কি নিরেস; অথবা শব্দে কান এত পরিষ্কার হল যে কোথা কোমল কোথা বা অতি-কোমল পর্দ্দায় ঘা পড়ছে তা শোনামাত্র ধরে দিলে মানুষ। কিন্তু এই হলেই ময়রার জহুরীর ও কালোয়াতের রসবোধ সৌন্দর্য ও সুষমাবোধ সম্পূর্ণ হয়েছে তা জোর করে বলা চলে