পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৩৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩৮৬
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

সহজ ও স্বাভাবিক উপমা তার সঙ্গে বিকট ও বেঢপ উপমা, দুই-ই কাজে আসছে আর্টিষ্টের—কুলোকানি, মূলোর্দাতি এ সব উপমা হাজির হ’ল রাক্ষসী দানবী এমনি নানা বিরূপ চিত্র দেবার বেলায়। স্বরূপ দেবার বেলাতেও এই ভাবের বিরূপ সাদৃশু খানিকটা কাজে লাগলো, যেমন— বৃষস্কন্ধ, শালপ্রাংশু, হয়গ্ৰীব, সহস্ৰবাহু ইত্যাদি ইত্যাদি। রূপের আতিশয্য দিয়ে ভাবের বিরাটুত্ব দেখানে চলুতি ভাষাতেও চল্লো, বেমন— সখের প্রাণ গড়ের яў, দিল দরিয়া। রূপগুণের অভাব বোঝাতেও এই রকমের আর এক প্রস্থ উপমা রয়েছে—ঠটাে-জগন্নাথ নড়েভোল, এসব উপমা অকমণ্য, নড়তে চড়তে যার ভুল হয়—তাকে বৈাঝালে। সহজ কথায় সাদৃশ্ব কাকে বলি যদি বলতে হয় তো বললো যেমন দেব। তেমনি দেবী হওয়া চাই তবে মিল্লো ঠিক সাদৃশ্য। সেই বৈদিক আমল থেকে এ পর্যন্ত উপমা ধরেই তাবৎ রূপসৃষ্টি হ’য়ে চলেছে, উপম হ’য়ে দেখা দেওয়া বিচিত্র রূপে ও ভাবে—এই হ’ল নিয়ম, এই বিশ্বজগৎ এও একটা বিরাটরূপ সৃষ্টি যা ভাবের উপম হ’য়ে বিচিত্র হয়ে দেখা দিলে। মানুষের মন সেই বিশ্ব-রচয়িতাকেও উপমার মধ্যে দিয়ে দেখে নিয়ে ব’লে গেছে—“বৃক্ষ ইব স্তব্ধো দিবি তিষ্ঠত্যেকঃ” এটি হ’ল রূপের দিক দিয়ে বিশ্ব-নিয়ন্তার সুন্দর উপমা। আবার ভাবট কেমন জানবার বেলায় উপমাই কাজে এল—“রসো বৈ সঃ” । কাজেই দেখবো, রূপ-রচনার বেলায় সাদৃশ্য উপমা ইত্যাদি কখনই বাদ দেওয়া চলে না। উত্তমের জন্য উত্তম উপমা অধমের জন্য অধম উপমা বড়র জন্ত বড় উপমা ছোটর জন্তে ছোট,—এই হচ্ছে নিয়ম নিরুপম নিরুপমা দুটি নাম ঘরে ঘরে চলতি ; কিন্তু এই দুইটি উপমা নাম রূপেই রইল এবং কথা-সাহিত্যেও বদ্ধ থাকলো বিশেষণের কোঠায়, যারা গড়বে অঁাকবে তাদের কাজে এল না বড় একটা । উপমা দিতে অনন্তকেও টান দিলেন কবি, কেন না অনন্তকে গড়ে দেখাতে হ’ল না একে দেখাতে হ’ল না তার ; কিন্তু যে বেচার ছবি মূর্তি করে, এ সাদৃশ্ব দেওয়া তার পক্ষে দুর্ঘট হ’ল—বড় জোর অনন্ত-শয্যা পর্যন্ত পৌছল সে । কবির। এইভাবে উপমা দেবার বেলায়, সুমেরু-শিখর তাও এনে বুকের উপর সহজে বসিয়ে দিলেন, কিন্তু মূর্তিকার দেখলে এরূপ উপমা দিলে তার গড়া মূর্তি পাথর চাপা পড়ে মারা যায়, কাজেই উপমা দেবার