পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৪০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩৯৪
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

শীতের সকালে একটা ভাবনা বিশ্ব জুড়ে আছে ; বর্ষার দিনে আর একটা ভাবনা। এমনি ক্ষণে ক্ষণে কালে কালে একই দৃশ্য নান৷ ভাবনায় বিভাবিত হ’য়ে উঠছে দেখা যাচ্ছে। ছবিতে গাছ লিখি মানুষ লিখি বা জন্তুই লিখি ভাবনাটি তার দ্বারা নিরূপিত হ’ল যেমনি তেমনি ভাবনা-সাদৃশ্ব পেলে হাতের কাজ আর্টিষ্টের। নানা উপমা নানা সাদৃশ্ব সূত্রে বাধা সমস্ত রূপ—এটা পাথর এটা গাছ ঐ মেঘ ওটি চাদ উনি সূর্য ওরা তারা, কেবলই এই পার্থক্য এবং ভিন্নতা নিয়েই তো বতে নেই বস্তুরূপ সমস্ত, ভাবের আদান-প্রদান বশর্তঃ এতে ওতে গলাগলি মিলছে তারা—এ হচ্ছে ওর মতো ও হচ্ছে এর মতো ; এ-যেন সাজঘরের নটনট সবাই অফুরন্ত একটা লীলার অন্তর্গত হ’য়ে ক্ষণে ক্ষণে ছাদ বদলে দেখা দিচ্ছে। উদয়-বেলার সূর্য কী সাজেই সেজে দাড়ালো প্রভাতে,—মনে হ’ল যেন সদ্যফোটা এতটুকু একটি রক্তজবা। এই দেখেই উপমা দিলেন ঋষি—“জবাকুসুমসঙ্কাশং”। হিমগিরি সে মহেশ্বরের অট্টহাস্তের স্বরমুর্তিতে দেখা দিলে কবিকে, আকাশের তার মাটির প্রদীপের মতো দেখালো, মাটির প্রদীপ দেখালে যেন অনিমিখ তারাগুলি,—এমনিই চলেছে কাজ রূপজগতে। জগৎ-সংসার জুড়ে সাদৃশ্বের যে সহজ নিয়ম কাজ করছে সেই নিয়মই স্বীকার করলে আর্টিষ্টের রচনা “তদ্বভিন্নত্বে সতি তদ্‌গতভূয়োধমৰ্বত্তম্।” জগতে কোথাও একটা সূর্যের অনুরূপ আর একটা সূর্য এমনতর ঘটনা হ’ল না, একটা গাছের অনুরূপ আর একটা গাছ এও হ’ল না, একটি মানুষের অনুরূপ আর একটি মানুষ এও হ’ল না, কিন্তু দুখানি ডানা, ফুলের দুটি পাপড়ি, গাছের দুটি পাতা, চোখের দুটি তার এ ওর অনুরূপ হ’ল দেখি, তবুও সেখানে স্থজনে সমান আসন পেলে না —এ রইলো দক্ষিণে ও রইলো বামে, একের অভিমুখী আর এক এই নিয়ে চল্লো কাজ বিশ্ব রচনার । যেমনটি গড়েছেন বিধাতা তেমনটি গড়তে চাইলে না মানুষ, দেখতেও চাইলে না মানুষ, এর প্রমাণ ইতিহাসের আদিমতম যুগের । মানুষের রচনা থেকেও পাওয়া যাচ্ছে। নিজের গায়ের চামড়া তাকে চামড়া বলে দেখেই তার আনন্দ হ’ল না, উন্ধীর অলকা-তিলকা সাজনের সুচিত্রিত সাদৃশ্ব দিয়ে সে জানাতে চল্লো কিসের সদৃশ হতে চায় সে ; কেবলমাত্র নর সে নারী সে এটুকু জ্ঞানেই তার আনন্দ হ’ল না। প্রমাণ