পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৪৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
দৃষ্টি ও সৃষ্টি
৩৭

টেনে নিতে লাগলো, একটু একটু করে খেলাঘর ভেঙ্গে গেল এবং কচি ছেলেকে কাযের যন্ত্রতন্ত্রগুলো দাঁতে চিবিয়ে ছোবড়া বানিয়ে ছেড়ে দিলে। আবার কোন ছেলেকে কায তেমন করে জোরে ধরতে পারলে না, কিম্বা কোন ছেলেটা কাযে পড়েও বাজের সাধনা অনেকখানি করে চল্লো, তারাই কাযের চাবুক এড়িয়ে গিয়ে কিম্বা সরে গিয়ে হয়ে উঠলো ভাবুক, অদ্ভুত কৌশলে তারা তাদের চোখে-দেখা, শুনে-দেখা, ছুঁয়ে-দেখা ইত্যাদি যে অত্যন্ত কাযের অফিস যোড়া তাদের পিঠে পক্ষিরাজের ডানা যুড়ে দিয়ে কায বাজাতে না গিয়ে, বাঁশি বাজাতে বেরিয়ে পড়লো জগতে। শিশুকালের হারানো চমৎকারি কাচ অনেক কষ্টে খুঁজে খুঁজে সেইটে বার করে সাদাসিধে কাযের চোখে-দেখা, শুনে-দেখা, ছুঁয়ে-দেখার উপরে যেমনি বেশ করে এঁটে দিলে মানুষ, অমনি স্বৰ্গ মর্ত পাতাল আবার তার কাছে তরুণ হয়ে দেখা দিলে, কৌতুকে কৌতূহলে ভরে উঠলো সৃষ্টির সামগ্রী! যে সব ইন্দ্রিয় কেবলি হিসেবের কাযে, পাহারার কাযে লেগেছিলো তারা হয়ে উঠলো কৌতূহলপরায়ণ এবং সন্ধানী, দিনের পর দিন বস্তুকে নিয়ে ঘটনাকে নিয়ে উল্টে-পাল্টে খেলতে আর দেখতে অথবা শুনতে লেগে গেল; শুধু ‘জল নড়ে ফল পড়ে’ এ পড়ায় আর রুচি হল না, কেমন করে জল চলচে, কেমন করে ফুল ফুটছে ঝরছে, কিবা সুরে পাখী গাইছে, আকাশের তারা কেমন করে চাইছে ইত্যাদি কেমন তা জানার আগ্রহ এবং চেষ্টা জেগে উঠলো। সাদাসিধে রকমের বুদ্ধির চাষ করে চলাতেই চোখে-দেখা, শুনে-দেখা ছুঁয়ে-দেখা বদ্ধ রইলো না। চঞ্চল দৃষ্টি এ-ফুলে ও-ফুলে এখনো উড়ে পড়তে লাগলো বটে, কিন্তু হঠাৎ দৃষ্টির চঞ্চলতার মধ্যে এক একটা সম্ আর ফাঁক পড়তে লাগলো, প্রজাপতি যেন হঠাৎ ডানা দুখানা স্থির করে আলোর পরশ, ফুলের পাপড়ির রং এবং ফুলের ভিতরকার কথা ধরবার চেষ্টা করতে থাকলো! দর্শন স্পর্শন শ্রবণের যান্ত্রিকতা কতকটা দূর হয়ে তাদের মধ্যে আন্তরিকতা একটু যেন বিকশিত হল। যে সব শরীর-যন্ত্রের কাযই ছিল বুদ্ধির সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাইরের প্রেরণায় চট্‌পট্‌ সাড়া দেওয়া নির্বিচারে, অন্তরের সঙ্গে মানুষ যেমনি তাদের মুক্ত করে দিলে অমনি ভিতরকার প্রেরণায় তারা ধীরে সুস্থে একটুখানি যত্নের সঙ্গে একটু কৌতূহল নিয়ে যেন আত্মীয়তা পাতাতে চল্লো বাইরের এটা