পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৬৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৫৮
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

ইত্যাদির সঙ্গে আর দুটো ভাষার ব্যাকরণাদির মিল থাকতে বাধ্য। কথার ব্যাকরণে যাকে বলে ‘ধাতু’, ছবির ব্যাকরণে তার নাম ‘কাঠামো’ (form)। ধারণ করে রাখে বলেই তাকে বলি ধাতু। ধাতু ও প্রত্যয় একত্র না হ’লে কথিত ভাষার শব্দরূপ পাই না, ছবির ভাষাতেও ঠিক ঐ নিয়ম—মাথা হাত পা ইত্যাদি রেখে দিয়ে একটা কাঠামো বা ফর্মা বাঁধা গেল। কিন্তু সেটা বানর না নর এ প্রত্যয় বা বিশ্বাস কিসে হবে যদি না ছবিতে নর বানরের বিশেষ প্রত্যয় দিই! শুধু এই নয়, বিভক্তি যিনি ভাগ করেন ভঙ্গি দেন, তাঁর চিহ্ন ইত্যাদি নানা ভঙ্গিতে কাঠামোয় জুড়ে দেওয়া চাই। বর্ণে বর্ণে রূপে রূপে নানা বস্তুর সঙ্গে নানা বস্তুতে সন্ধি সমাস করার সূত্র আছে, ছবির ব্যাকরণে, বচন ক্রিয়া বিশেষ্য বিশেষণ সর্বনাম অব্যয় এমন কি মুগ্ধবোধের সবখানি অলঙ্কারশাস্ত্রের সবখানির সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া চলে ছবির ব্যাকরণ আর অলঙ্কারের ধারাগুলো। কথিত ভাষার বেলায় ‘ভৃ’ ধাতু গক্ প্রত্যয় করে যেমন ‘ভৃঙ্গ’, ছবির ভাষায় কালো ফোঁটার উপরে দুটো রেফ্ যোগ করলেই হয় ‘দ্বিরেফ্ ভৃঙ্গ’ আবার ভৃঙ্গের কালো ফোঁটায় রেফ্ না দিয়ে শুণ্ড প্রত্যয় দিলে হয় ‘ভৃঙ্গার’ যেমন ‘ভৃ’ ধাতুতে ‘গিক’ প্রত্যয় জুড়লে হয় ‘ভৃঙ্গি’।

 ছবি লেখার উৎসাহ নেই কিন্তু ছবির ব্যাকরণ লেখার আম্বা আছে এমন ছাত্র যদি পাই তো চিত্রকরে আর বৈয়াকরণে মিলে এই ভাবে আমরা ছবি দেওয়া একটা ব্যাকরণ রচনা করতে পারি, কিন্তু এ কাজে নামতে আমার সাহস নেই কেননা ব্যাকরণ বলে জিনিষটা আমার সঙ্গে কি কথিত ভাষা কি চিত্রিত ভাষা দুয়ের দিক দিয়েই চিরকাল ঝগড়া করে বসে আছে। সংকীর্তিত ভাষা যেমন, তেমনি সংচিত্রিত ভাষাও একটা ভাষা, ব্যাকরণের প্রত্যক্ষ প্রমাণ দিয়ে এইটে যদি সাব্যস্ত হল তবে এও ঠিক হ’ল যে ছবি দেখা শুধু চোখ নিয়ে চলে না ভাষা-জ্ঞানও থাকা চাই দ্রষ্টার, ছবি-স্রষ্টার পক্ষেও ঐ একই কথা। ‘রসগোল্লা খেতে মিষ্টি, টাপুর টুপুর পড়ে বৃষ্টি’, এটা বুঝতে পারে না পাঠশালায় না গিয়েও এমন ছেলে কমই আছে, কিন্তু শিশুবোধের পাঠ থেকে ভাষা-জ্ঞান বেশ একটু না এগোলে—

‘মধুর মধুর ধ্বনি বাজে
হৃদয়-কমল-বন মাঝে!’